ফার্স্টপোস্টের নিবন্ধ :
জামায়াতের সক্রিয় হওয়ার পেছনের শক্তি পাকিস্তান!

Published: 22 October 2023

পোস্ট ডেস্ক :


বাংলাদেশ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জামায়াতে ইসলামীর মতো বিরোধীদল রাজপথে মিটিং মিছিল ও সমাবেশ করছে। তারা আসন্ন নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। নির্বাচনের আগে ক্রমে জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত ইসলামী শক্তিগুলো তাদের কার্যক্রম সক্রিয় হয়ে উঠছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আলোর মুখ দেখলেও সেটা বেশি দূর এগোয়নি। কারণ এখনো বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গণহত্যার জন্য করাচির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে লজ্জাজনক হারকে কোনোমতে মেনে নিতে পারলেও এখনো তারা বাংলাদেশে স্থানীয় নেতাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়। ভারতকে কল্পিত বড় শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে বাংলাদেশে তারা প্রভাব বিস্তার করতে চায়। দেশটি ম্যাকিয়াভ্যালিয়ান চক্রান্তের মাধ্যমে ঢাকায় রাজনৈতিক অবস্থাকে প্রভাবিত করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে তারা ইসলামীসমনা দলগুলোকে তাদের দুরভিসন্ধি পূরণে ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। ২০২০ সালে দেশটির সেনাবাহিনী ইমরান খান সরকারকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। ইসলামাবাদের পক্ষে আখ্যান তৈরি, ঢাকার আঞ্চলিক নীতিকে প্রভাবিত করা ছিল উক্ত যোগাযোগের লক্ষ্য। এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে প্রভাবিত করাও এ কূটচালের অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদিও পাকিস্তান বাংলাদেশকে তার কথা শোনানোর জন্য তৃতীয়পক্ষের কুশীলবকে ঢেকে আনে বলে এ ক্যাম্পেইন শুরুতেই হোঁচট খায়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বারংবার দেশের নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। এ তালিকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের প্রভাবশালী ব্যক্তিও রয়েছেন। তারা শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং বাংলাদেশকে ভারতের মক্কেল হিসেবে দেখিয়ে ইন্দো-বাংলা সম্পর্কে দাগ ফেলতে চায়। স্থানীয় গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে তারা জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলোর পক্ষে সংবাদ পরিবেশ করে।

এটা মনে রাখা দরকার, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে পূর্ব-পাকিস্তানে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের ওপর ভয়াবহ মানবতাবিরোধী গণহত্যা চালায় এবং লজ্জ্বাজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় মেনে নেয়। যুদ্ধের সময় জামায়াত শক্তভাবে একক পাকিস্তানের পক্ষ নেয় এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করে। এরই ধারাবাহিকতায় জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় কর্মী ও নেতা—যেমন মতিউর রহমান নিজামী এবং আবদুল কাদের মোল্লাকে বাংলাদেশ সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং তা কার্যকর করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের হত্যার অভিযোগ তোলা হয়। বলা বাহুল্য, পাকিস্তান জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে।

২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামাবাদ যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টিতে সফল হয়েছে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদে শেখ হাসিনাকে পাকিস্তানপন্থিদের পুনরুত্থানের সুযোগ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। এটা পাকিস্তানের জন্য একটা উপহারের মতো যেখানে তারা ইসলামাবাদকে পুনরায় আমেরিকান প্রভাবের আওতায় নিয়ে যেতে পেরেছে। এ ছাড়া কৌশলগত স্বৈরতন্ত্রের নামে রাশিয়ার সঙ্গে ইমরানের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা তাকে পতনের সম্মুখীন করেছে।

এমন সময়ে বাংলাদেশে ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে জামায়াতে ইসলামী আবারো তাদের দলীয় ব্যানার নিয়ে রাজপথে নেমেছে। যত যাই হোক জামায়াত খুব কম সময়ে দ্বন্দ্বমূলক রাজনীতিতে ফেরত আসতে পেরেছে। দলটিকে সরকার বিরোধী মিছিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করতেও দেখা গেছে। যদিও এ সংঘাতমূলক পদ্ধতি জামায়াত বা বাংলাদেশের জন্য সফল বলে প্রমাণিত হয়নি। উপরন্তু, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন নির্বাচন চাওয়ায় দলটি জামায়াতের কাছ থেকে আন্তরিক সমর্থন পেয়েছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাতিল করে। তখন থেকেই বিএনপি এবং তার সহযোগীরা এর বিরোধিতা শুরু করে। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, দলগুলো নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয়ের সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ন করার বিষয়ে নিজেদের নিয়ে সন্দেহের ভেতর রয়েছে। এ কারণেই তাদের ভেতর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার তৎপরতা বাড়ছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর গভর্ন্যান্স ট্র্যাক থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি), হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (এইচডিআই) এবং সামগ্রিকভাবে উন্নত জীবনযাত্রায় জোয়ার এসেছে। বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে ভালো আছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ভালো আছে, যে দেশটি অর্থনৈতিক পতনের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। এই উন্নয়ন এটাও দেখায়, ইসলামাবাদ তার সুবিধার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহকে প্রভাবিত করার চেষ্টায় কতটা জড়িত হতে পারে।

বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিপথে সামনের দিনগুলো কঠিন। কারণ আসন্ন রাজনৈতিক দৃশ্যপট এটা নির্ধারণ করবে যে দেশটি অগ্রগতির পথে থাকবে নাকি রাজপথে সহিংসতার দিনে ফিরে যাবে।

এন সি বিপিন্দ্র : নিউ দিল্লিকেন্দ্রিক থিংক ট্যাংক ল অ্যান্ড সোসাইটি অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান।