প্রেমের বিয়ের ১০ বছর পর চলে গেলেন স্ত্রী, অতঃপর…

Published: 20 November 2023

বিশেষ সংবাদদাতা :


তিন বছরের প্রেম। এরপর বিয়ে। ১০ বছরের সেই সাজানো সংসার ভেঙে স্ত্রী চলে যাওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন সোহেল রানা বিশ্বাস বাবু (৩২)। গত তিন বছর একমাত্র মেয়ের ছবি বুকে নিয়ে সময় কাটছে তার।

সোহেল গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের খাগড়াবাড়িয়া গ্রামের জিয়াউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। মায়ের সঙ্গে তিনি এখন উপজেলার চাপ্তা গ্রামের মামার বাড়িতে বসবাস করছেন।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, ভালোবেসে ২০০৮ সালে ভোলা সদরের শিউলী আক্তার মিম নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন বাবু। ১০ বছর সংসার করার পর ২০১৮ সালে অভাবের অজুহাত দেখিয়ে বাবার বাড়ি চলে চান তার স্ত্রী। সঙ্গে নিয়ে যান আট বছরের মেয়েকেও। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বাবু। ডিস্কাইনেসিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।

তিন বছরের বেশি সময় অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলের চিকিৎসা চালিয়েছেন মা সুফিয়া বেগম। সর্বশেষ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতাল থেকে দুই মাসের ওষুধ নিয়ে এসেছিলেন তিনি। সেই ওষুধও শেষ হয়ে গেছে।

সোহেল রানা বিশ্বাস বাবুর বর্তমানে বিছানায় সময় কাটে মোবাইল ফোনে মেয়ের ছবি দেখে। মানসিক ভারসাম্য হারালেও ভোলেননি মেয়ের কথা। তাই এক নজর দেখার খুব ইচ্ছা তার। সোহেলের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছে বাবুর মা ও তার এলাকাবাসী।

বাবুর মা সুফিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে এক সময় খুব ভালো ছিল। ২০১৮ সালে অভাবের অজুহাত দেখিয়ে মেয়েকে নিয়ে আমার ছেলেকে রেখে চলে যায় স্ত্রী। এরপর আমার ছেলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ ঘরে পড়ে। এতদিন ধরে আমি ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে আসছি। বর্তমানে অন্যের বাড়িতে কাজ করি; যা পাই তা দিয়েই চলে আমাদের মা ছেলের সংসার। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতাল থেকে দুই মাসের ওষুধ নিয়ে আসছিলাম সব শেষ হয়ে গেছে। অর্থাভাবে ছেলের ওষুধ কিনতে পারছি না। আমি সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রতিবেশী আমিনুর বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ছেলের চিকিৎসার খরচ চালিয়ে আসছে বাবুর মা। তাও অন্যের বাড়িতে কাজ করে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে ঠিকমতো সংসারই চলে না। চিকিৎসা করাবেন কী করে।

গোপালগঞ্জ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হারুণ অর রশীদ বলেন, বাবুর ঘটনাটি শুনে খুবই খারাপ লেগেছে। বাবুর পরিবার আবেদন করলে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে তার চিকিৎসার জন্য নিয়মানুযায়ী সাহায্য করা হবে।

রাতইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঞ্জুরুল ইসলাম আঞ্জু বলেন, সোহেল রানা বিশ্বাস বাবুর মাকে প্রায়ই সাময়িক সহযোগিতা করি। তাদের বিষয়টি নজরে আছে আমাদের। আমার ইউপির পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমি চেষ্টা করব তাকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার।