টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অতিথি পাখি

Published: 27 December 2023

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা :


দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া হাওর থেকে অতিথি পাখি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। শীত মৌসুমে অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকার কথা। অথচ এখন পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার হাওরে অতিথি পাখির দেখা তেমন মিলছে না। এইদিকে অতিথি পাখির আগমনকে কেন্দ্র করে বেড়েছে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য। টাঙ্গুয়ায় গত কয়েক বছর ধরে অতিথি পাখির সংখ্যা কমে আসছে। এবার হাওরে কিছু সংখ্যক লেনজা, পিং, বালি হাঁস, সরালি, কাইম, গংগা কবুতর, কালাকূড়া, পিয়ারিসহ বিভিন্ন রঙের অতিথি পাখি দেখা গেলেও ঝাঁকে ঝাঁকে আগের মতো দেখা মিলছে না। যা কিছু আসছে তা আবার রাতের আঁধারে শিকার করছে অসাধু পাখি শিকারিরা। পাখি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়া, নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করতে কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নিতে না পারায় বিশাল এই হাওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অতিথি পাখি। সূত্র জানায়, অক্টোবর থেকে টাঙ্গুয়ায় শুরু হয় পরিযায়ী পাখির সমাবেশ। সাইবেরিযা, মঙ্গোলিয়া, হিমালয়, উত্তর এশিয়া, নেপালসহ পৃথিবীর নানা শীত প্রধান দেশ থেকে অতিথি পাখি বাংলাদেশের বৃহৎ জলমহাল হাওরে আসে।

এসব পাখি ফেব্রুয়ারি, মার্চ পর্যন্ত অবস্থান করে হাওরে। আইইউসিএনের তথ্য মতে, ২০০২ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরে দেশি-বিদেশি পরিযায়ী পাখির মধ্যে পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় প্যালাসিস ঈগল পাখি ছাড়াও কালেম, পানকৌড়ি, ভূতিহাঁস, পিয়ংহাঁস, খয়রাবগা, লেঞ্জাহাঁস, নেউপিপি, সরালি, রাজসরালি, চখাচখি, পাতি মাছরাঙা, পাকড়া মাছরাঙা, মরিচা ভূতিহাঁস, সারসহ প্রায় ২১৯ প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি ছিল। কিন্তু আইইউসিএনের সর্বশেষ জরিপে টাঙ্গুয়া হাওরে ৬৪ হাজার পাখির অস্তিত্ব দেখানো হয়েছে। এতে ৮৬ জাতের দেশীয় এবং ৮৩ জাতের বিদেশি পাখির কথা উল্লেখ করা হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জনাশিউস’র নির্বাহী চেয়ারম্যান সাজেদা আহমেদ জানান, গত কয়েক বছরে হাওরে পাখির সংখ্যা কমেছে ৮৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে প্রায় দুই লাখ অতিথি পাখি এখানে এসেছিল। ২০২২ সালে কমে দাঁড়ায় ৩০ হাজারে। স্থানীয়রা বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই পাখি কম আসছে। একশ্রেণির অসাধু পাখি শিকারিদের কারণে দিন দিন পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে হাওর পাড়ের মধ্যনগর উপজেলার রূপনগর, নিশ্চিন্তপুর এবং তাহিরপুর উপজেলার লামাগাঁও, দুমাল, হান্নাখালিসহ বিভিন্ন গ্রামের পেশাদার পাখি শিকারি রয়েছে। হাওরের ইজারাকৃত জলমহালের পাহারাদারেরাও অতিথি পাখি শিকারের সঙ্গে জড়িত। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, টাঙ্গুয়া হাওর জেলা প্রশাসনের নজরদারিতে আছে। হাওরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। অতিথি পাখি কেউ শিকার করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।