চাকরির কথা বলে ২৪ লাখ টাকা আদায়, ৩ চাকরিপ্রার্থীকেই নৃশংসভাবে হত্যা!
পোস্ট ডেস্ক :
টাঙ্গাইলের চাকরীচ্যুত সেনা সদস্য মো. কনক। তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিন যুবকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ২৪ লাখ। তবে চাকরি দিতে না পেরে ওই তিন চাকরিপ্রার্থীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মরদেহ পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজ উদ্দিন ফরাজীর আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই দিন সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার গোলাম সবুর প্রেস বিফ্রিং এ তথ্য জানান।
দুইদিনের রিমান্ড শেষে এই তিন হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কনক। এরপর তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।
কনক টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার মুশুদ্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামের তালেব আলীর ছেলে। তিনি ঢাকা সেনানিবাসে সৈনিক পদে কর্মরত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চাকরির নাম করে তিনি হত্যা করেছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে সামাদ সজিব (১৮), গোপালপুর উপজেলার মজিদপুর গ্রামের নাসিম উদ্দিনের ছেলে আতিক হাসান (১৮) এবং জামালপুর সদর উপজেলার জুনায়েদপাড়া গ্রামের ঠান্ডা মিয়ার ছেলে মো. রাহাদ হোসেন উজ্জ্বলকে (১৮)।
সামাদ সজিবের মরদেহ গত ১ ফেব্রুয়ারি বাসাইল উপজেলার পাটখাগুড়ি গ্রামের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে একটি ভুট্টা খেত থেকে উদ্ধার করা হয়। আতিক হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয় গত ৩ মার্চ, মধুপুর গড় এলাকার একটি আনারস বাগান থেকে।
আর গত ১২ মার্চ রাহাত হোসেন উজ্জ্বলের মরদেহ পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কের পাশে মীরহামজানি গ্রামের একটি বালুর স্তূপ থেকে।
মরদেহগুলো উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির নামে মামলা করে। পরিচয় না পাওয়ায় মরদেহগুলো বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
তিনটি মামলাই বর্তমানে তদন্ত করছে টাঙ্গাইল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পুলিশ সুপার বলেন, ওই তিন যুবকের খোঁজ না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি সেনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। এ ঘটনায় কনককে চাকরিচ্যুত করা হয়।
নিহত সামাদ সজিবের বাবা বাদী হয়ে কনকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল আদালতে মামলা করেছেন। আদালতের নির্দেশে গত ১ জুন মামলাটি ঘাটাইল থানায় তালিকাভুক্ত করা হয়।
এ ছাড়া নিহত আতিক হাসানের বাবা বাদী হয়ে কনকসহ চার জনের বিরুদ্ধে গোপালপুর থানায় গত ২১ জুন এবং রাহাত উজ্জ্বলের বাবা বাদী হয়ে কনকের বিরুদ্ধে গত ১৪ এপ্রিল জামালপুর সদর থানায় মামলা করেন।
ঘাটাইল থানার মামলাটি তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে, জামালপুর সদর থানায় দায়েরকৃত মামলায় কনক কিছুদিন আগে গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি জামালপুর কারাগারে আটক আছেন। পরে এই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১৬ জুলাই আদালতের মাধ্যমে কারাগার থেকে তাকে দুদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে তিন যুবককে হত্যার কথা স্বীকার করেন কনক। পাশাপাশি এক সহযোগীর নামও প্রকাশ করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে কনক জানিয়েছেন, তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে যে ২৪ লাখ টাকা নিয়েছিলেন, তার মধ্যে নয় লাখ টাকা তার সহযোগীকে দিয়েছেন। বাকি টাকা তিনি অনলাইনে জুয়া খেলে হেরেছেন।