তোপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ ছয় শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগ
বিশেষ সংবাদদাতা :
ব্যাংকিং খাতে হওয়া লুটপাট, দখল, অনৈতিক সুবিধা ও নানান অনিয়মে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নরসহ শীর্ষ ছয় কর্মকর্তা।
সরকার পতনের পর অফিস খোলার দ্বিতীয় দিন বুধবার (৭ আগস্ট) একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দফতরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করেন।
একপর্যায়ে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল ভবনে অবস্থিত গভর্নরের ফ্লোরে ঢুকে পড়েন। তাদের বিক্ষোভে প্রথমে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান সাদা কাগজে সই করে পদত্যাগ করেন।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা–কর্মচারীরা এরপর একে একে ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, মো. খুরশীদ আলম ও মো. হাবিবুর রহমানকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন। তারাও পদত্যাগ করেছেন বলে কাগজে সই করেন। পরে ব্যাংকের উপদেষ্টা আবু ফারাহ মো. নাসের ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাসুদ বিশ্বাসকে পদত্যাগ করতে বলেন।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের দাবির মুখে পদত্যাগ করে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চার ডেপুটি গভর্নর এবং আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান বিক্ষুধ্ব কর্মকর্তাদের দাবির মুখে ‘পদত্যাগ’ করেছেন এবং যারা কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছেন। এ সময় সেনাসদস্যরা তাঁদের নিরাপত্তা দেন। তবে ঘটনার সময় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কার্যালয়ে ছিলেন না।
বিক্ষুব্ধ এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কোনো ব্যানার বহন করছিলেন না। প্রত্যক্ষদশীররা জানিয়েছেন, দুই শতাধিক কর্মকর্তা–কর্মচারী এই বিক্ষোভে যোগ দেন। তাঁদের দাবি, ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব শীর্ষ কর্মকর্তা দায়ী এবং তাঁরা দায়িত্বে থাকলে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরবে না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা প্রথমে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের কক্ষে ঢুকে পড়েন এবং তাঁকে পদত্যাগে চাপ দেন। এ সময় কাজী ছাইদুর রহমান একটি সাদা কাগজে পদত্যাগের কথা লেখেন এবং স্বাক্ষর করেন। এরপর তিনি ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা–কর্মচারীরা এরপর ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারের কক্ষে যান। ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার জানান, তিনি কার্যালয় ত্যাগ করছেন। বাকি দুই ডেপুটি গভর্নর মো. খুরশীদ আলম ও মো. হাবিবুর রহমান কার্যালয়ে ছিলেন না। তবে কর্মচারীরা তাঁদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, তাঁরা অফিসে আর আসবেন না। একইভাবে ব্যাংকের উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাসুদ বিশ্বাসও জানান, তাঁরা আর ব্যাংকে আসবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এই কর্মকর্তারা সবাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাহী পরিচালক ১ জাকির হোসেন চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা করেন।