আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

Published: 9 August 2024

বিশেষ সংবাদদাতা :


অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এবং এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত বা আলোচনার সুযোগ হয়নি। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও দেখা জরুরি। এখনও অনেক থানা তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) অন্তর্র্বতী সরকারের বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

রিজওয়ানা হাসান বৈঠকের বলেন, মতপ্রকাশের বিষয়ে করণীয়, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে মন্ত্রণালয়গুলো পরিচালনার জন্য আলোচনা, রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠনে সরকবার সঙ্গে আলোচনা, আর্থিক খাতগুলো সক্রিয় করতে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে পরিবর্তন, ব্যবসায়িক পরিবর্তন সৃষ্টি, বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হয়।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকারের মেয়াদের বিষয়ে এখন আলোচনা করা সম্ভব না। কারণ, এখানে কী ধরনের রিফর্ম করা হবে, তার জন্য একটি সময় লাগবে। দিনশেষে আমাদের সবারই যাত্রা যেহেতু গণতন্ত্রের দিকেই। সেজন্য কী ধরনের সংস্কার করা হবে, তার ওপর এ সরকারের মেয়াদ নির্ভর করবে। এদিন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রথম বৈঠকে তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা অংশ নেন।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হলো। বৈঠকে আমরা সবাই যার যার কথা বলেছি। এক ধরনের ভাববিনিময় ও মতবিনিময় হয়েছে। আমাদের মধ্যে দফতর বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আর্থিক খাত নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। এই দুটি খাতকে কীভাবে যত দ্রুতসম্ভব স্বাভাবিক করা যায়, সে বিষয়টিকেই আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা করেছি।

রিজওয়ানা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা বেশ সময় নিয়ে আলোচনা করেছি। যত দ্রুতসম্ভব কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের একটি বিষয় বুঝতে হবে, আজই সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু যত দ্রুত সবকিছু সমাধান করা যায়, সেটিই চেষ্টা থাকবে।

ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, আইজিপির কাছে এ বিষয়ে কিছু তথ্য রয়েছে। সব তথ্য আবার প্রচারিত তথ্যের সঙ্গে মিলছে না। প্রকৃতপক্ষে থানাগুলোও এখনো কাজে ফিরতে পারেনি। এ অবস্থায় পুলিশ যত দ্রুতসম্ভব যেন কাজে নেমে যায়, সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করতে চাই। তবে এর জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। পুলিশের মতো একটি বাহিনীর মনোবল ভেঙে গেলে তাদের পক্ষে কাজ করা কঠিন। তাই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যারা রয়েছেন, তাদেরও সঙ্গে নিয়ে সবার সহযোগিতায় পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফিরিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর হামলা প্রতিরোধে সবাই মিলে রক্ষা বলয় তৈরির কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান রিজওয়ানা। বলেন, কিছু কিছু জায়গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ হচ্ছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বশীল সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে আপাতত একটি রক্ষা বলয় তৈরি করে সবাইকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে আইজিপির সঙ্গে কথা হয়েছে।

আর্থিক খাত নিয়ে আলোচনার বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক খাতগুলোকে শুধু চালু করলেই হবে না, সক্রিয় করতে হবে। এর জন্য নেতৃত্বস্থানীয় জায়গাগুলোতে যে পরিবর্তনগুলো প্রয়োজন, সেগুলো অনতিবিলম্বে আনার চেষ্টা করা হবে।

তিনি বলেন, ব্যবসাকে উজ্জীবিত করার জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। তাদের উজ্জীবিত করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, সেগুলো করা হবে। জনগণের কষ্ট লাঘবে বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আমাদের যে উপদেষ্টা রয়েছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে এসব বিষয়ে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন।

দুর্নীতি বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আর্থিক খাতে নানা ধরনের ‘ইভিল প্র্যাকটিস’ রয়েছে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে হবে। যেসব জায়গা ফাঁকা রয়েছে সে জায়গাগুলোতে উপযুক্ত জনবল বসিয়ে ইভিল প্র্যাকটিসগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে একটি দুর্নীতি বা ব্যাড প্র্যাকটিস নয়, সার্বিকভাবে গোটা ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই ব্যাড প্র্যাকটিস দূর করার জন্য কাজ করব।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। এসময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।