ভারতের সাহায্যে আ. লীগ আবারো অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়: মির্জা ফখরুল

Published: 15 August 2024

বিশেষ সংবাদদাতা :


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে ভারতের সাহায্যে আওয়ামী লীগ আবারো অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার ও নৈরাজ্য ঠেকাতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। দু’দিনের অবস্থান কর্মসূচির আজ শেষ দিন ছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গত ১৫ বছর বিএনপি যে মূল্য দিয়েছে তা পৃথিবীতে বিরল। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে গণহত্যাকারীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার করতে হবে। এ বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে নির্বাচন দিবে তাতে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে সরকারকে যৌক্তিক সময় দেবে বিএনপি। এই সরকারকে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত সহযোগিতা করার কথাও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে বিএনপির ১১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির নেতাদেরও ছাড় দেয়া হয়নি। এখন আর ঝামেলা করে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই টিকতে পারবে না।

ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়ে ফখরুল বলেন, ৩২-এ ফুল দেবেন কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু ছাত্ররা আপনাদের আর দেখতে চায় না। ওই ছবি আর দেখতে চায় না।

সারা দেশে আওয়ামী লীগের ক্ষুদে হাসিনা তৈরি হয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আল্লাহ তাদের বিচার করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে একটি জায়গায় নিয়ে এসে নির্দিষ্ট সময়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে। ভোটের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন চাই।
তারেক রহমানকে হেলমেট পরিয়ে আদালতে নেয়া হয়েছিল মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আল্লাহ তাদেরও একই অবস্থা তৈরি করেছে। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যত হত্যা আর নির্যাতন করেছেন, তা আন্তর্জাতিক আইনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির এই নেতা।

নেতাকর্মীদের দলের সম্মান ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইতিহাস বড় নির্মম, আল্লাহ তা’আলার বিচার বড় নির্মম। আল্লাহ তা’আলা চোখের সামনে দেখিয়ে দিলেন যে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী।

তিনি শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করে তিনি বলেন, আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের ফকির করতে পারি। ফকিরকে ধনী করতে পারি। জীবিতকে মৃত করতে পারি, মৃতকে জীবিত করতে পারি’। আল্লাহ তাআলার এটিকে অস্বীকার করেছিল হাসিনা। সীমালঙ্ঘন করেছিলেন তিনি। অহংকার, কী অহংকার! আল্লাহর কি হুকুম, তাকে পালিয়ে যেতে হলো সেই জায়গায় যেখানে তার গোড়া পোতানো আছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, খুনি শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে আমাদের নেতা-কর্মীদের স্টিম রোলার চালিয়েছে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। শত শত নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। ২৪ সালের নির্বাচনের আগে ২৮ হাজার নেতা-কর্মীকে মাত্র দু’দিনে কারাগারে নিয়েছিল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এত প্রাণ দিয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যা ইতিহাসে বিরল। অনেকে মা তার ছেলে হারিয়েছে, বোন তার ভাই হারিয়েছে।

ছাত্র আন্দোলনে নিহত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আবু সাইদ টিউশনি করে লেখা পড়া চালিয়েছে। গরিব ঘরের সন্তান।

তিনি বলেন, একটা আবার নতুন খেলা শুরু হয়েছে সংখ্যালঘু, কিন্তু এদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়। তারা আবার ষড়যন্ত্র করছে, কিছু একটা করে ভারতের সহায়তায় ফিরে আসতে চায়। এদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে হবে ‘

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ৬৯ , ৭১ দেখেছেন, ২৪ সাল দেখেছেন। দেখেছেন যে দেশের জনগণ কিভাবে জ্বলে উঠতে পারে। ভালই ভালই আত্মসমর্পণ করেন। যারা বাইরে আছেন এদিক-ওদিক করছেন ভালো হয়ে যান। বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের কথা তুলে ধরে বলেন, এদেরকে বিচার করতে হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিরোধী ট্রাইব্যুনালে। অপরাধ করেছেন গণহত্যা চালিয়েছেন। যারা লুণ্ঠন করেছেন, নির্যাতন করেছেন, হত্যা করেছেন তাদের বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল, এ সরকারকে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করতে হবে। যতদিন তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে। অবশ্যই বর্তমান সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী কর্মকর্তা হয়েও যারা স্বৈরাচার সরকারের দোসর হয়ে কাজ করেছিলেন তাদেরকে বের করতে হবে, যারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী এই সরকারের হয়ে সরকারে বসে থেকে কাজ করেছেন তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ড আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের সাধারণ শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।