হাসিনাকে স্থায়ী আশ্রয় দিলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের চিড় ধরবে : কর্নেল অলি
বিশেষ সংবাদদাতা :
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্থায়ী আশ্রয় দেয়া হলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের চিড় ধরবে।
শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংঘঠিত বিভিন্ন গণহত্যার সুষ্ঠ বিচার করে বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিও জানান তিনি।
তিনি বলেন, গণহত্যার হুকুমদাতা জাতীয় শত্রুদের কোথাও আশ্রয় না দিয়ে তাদের আয়নাঘরে নিয়ে গিয়ে সেখানকার স্বাদ বোঝাতে হবে। সঙ্গে নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ যেন ভিন্ন মোড়কে আসতে না পারে সেই ব্যাপারেও সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী পৃষ্টপোষকতায় যাদের চাকরি হয়েছে সেসব দালালদের শুধু বদলি কিংবা চাকরিচ্যুত না করে তাদের বরখাস্ত করতে হবে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
অলি আহমেদ বলেন, ১৯৭২ সালের পর থেকে অদ্যাবধি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সদস্যরাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা-জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে দখল করেছে, উপাসনালয় ধ্বংস করেছে। পক্ষান্তরে তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের উপর তার দোষ চাপানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল, এখনও রয়েছে। আশা করি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা আর নতুনভাবে বিভ্রান্ত হবে না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বাংলাদেশ হচ্ছে একটি স্বর্গরাজ্য। কারণ এদেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলমান।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর জুলুম হচ্ছে, তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে হৈচৈ করছে এবং যে ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছে, সেগুলো ভিত্তিহীন। তবে দেশে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কিছু কিছু জায়গায় ক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী জুলুমবাজ এবং গণহত্যাকারীদের উপর চড়াও হয়েছে। জনগণ ধর্মের বিবেচনায় কারো ক্ষতি সাধন করেনি। বরং গণহত্যাকারীর দোসরদের উপর আক্রমণ করেছে। এটা যুগে যুগে অনেক দেশে হয়েছে। আমি আবারও বলছি-বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।
অলি বলেন, বিগত ১৫ বছর যাবৎ আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার কর্তৃক প্রত্যেক স্তরে কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল, ব্যাংকের টাকা লুণ্ঠন, দুর্নীতি, টাকা পাচার, চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য, বিরোধী দলগুলির উপর অমানবিক অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, খুন, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, জায়গা দখল, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সকল ক্ষেত্রে বিচারহীনতার পুঞ্জিভূত বেদনা সহ্য করে মানুষ নীরব ছিল।
তিনি বলেন, ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে এদেশের মানুষ আরেকবার দেশ স্বাধীন করেছে। এ ধরনের সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এদেশের উপযুক্ত উত্তরসূরি। বর্তমান প্রজন্মকে নিয়ে আমরা গর্বিত।
এলডিপির প্রেসিডেন্ট বলেন, সেনাবাহিনীকে বলতে চাই-আওয়ামী স্বৈরাচারী, গণহত্যাকারী, টাকা লুণ্ঠনকারী, দুর্নীতিবাজ সাবেক মন্ত্রী, এমপি বা নেতা যারা বিভিন্ন সেনা নিবাসে আশ্রয় নিয়েছে বা লুকিয়ে আছে তাদেরকে আয়না ঘরে রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন এবং আইএসপিআর এর মাধ্যমে সংবাদপত্রে খবরগুলি প্রকাশ করুন। এতে আপনাদের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। এছাড়া বাংলাদেশের কোন নাগরিকের উচিত হবে না এই ধরনের জাতীয় শত্রুকে আশ্রয় দেয়া। কোন বাসায় এই ধরনের জাতীয় শত্রু পাওয়া গেলে আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে। আশা করি, এই জাতীয় শত্রুদের ধরিয়ে দিবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি প্রমুখ।