চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ উপহার দেবে : মেজর হাফিজ
বিশেষ সংবাদদাতা :
বিপ্লবের সফল পরিণতি দেখতে চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে নিশ্চিত করতে হবে তারা ক্ষমতা গেলে আওয়ামী লীগের মতো স্বৈরাচার হবে না। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ উপহার দেবে।
শনিবার (১৭ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র- জনতার উপর পুলিশের গণহত্যার নির্দেশদাতা খুনি হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে বিচার ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, তারেক রহমানকে ফোনে বলেছি, বিএনপি যেন আওয়ামী লীগ না হয়ে যায়। ক্ষমতায় যাই বা না যাই, আর কখনও যেন চাঁদাবাজি, লুটতরাজ বিএনপি না করে আওয়ামী লীগের মতো। সেদিকে হাইকমান্ডকে নজর দিতে হবে।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা, কিন্তু প্রভু হওয়ার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হবে, অধীনস্থ করবেন না।’
শেখ হাসিনা দেশকে ভারতের গোলাম বানিয়েছে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, ভারতের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যারা বলে তারা ভারতে গিয়ে তা পালন করলেই হয়, দেশকে কেন কলঙ্কিত করবে তারা। সবচেয়ে বড় ঘাতক শেখ হাসিনা। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে। ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে আহ্বান হাসিনাকে ফেরত দিন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার ৩০০ আসনের মনোনয়ন দিতে পারলে ২৯০টি বিএনপি পাবে। খালেদা জিয়া আবারও বাংলাদেশের পিএম হবে।
তিনি বলেন, ভারতের ষড়যন্ত্র ও অংশগ্রহণে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটে। বিশেষ আদালত করে পিলখানার খুনিদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করুন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পিলখানা নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করুন।
ভারতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন, সেজন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। কিন্তু আপনারা এ দেশে প্রভু হওয়ার কোনো চেষ্টা করবেন না। জনগণের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে আপনাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখবে।
মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ (বীর বিক্রম) বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার। আর এখন মুক্তিযোদ্ধা এসে দাড়িয়েছে আড়াই লাখ। এত মুক্তিযোদ্ধা এলো কিভাবে? এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে আওয়ামী সরকার। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অনেক মন্ত্রীরাও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছে। আমরা এখন আর কোনো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দেখতে চাই না।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা গত ১৫-১৭ বছরে ছাত্রলীগের মতো বক্তব্য দিয়েছে! অবশেষে জনতার ডাকে সাড়া দিয়ে তারা মানুষের জন্য কাজ করেছে। সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সরানোর জন্য অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। সেজন্য সেনাবাহিনীকে সাধুবাদ জানাই। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নামে যে ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে, অবিলম্বে সেটি বন্ধ করতে হবে। এদেশকে আওয়ামী সরকার প্রতিবেশী দেশের গোলাম বানিয়ে ফেলেছে।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই ১৬ বছরে পুলিশ বাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে, এটা পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম বাহিনী। পুলিশ বাহিনীর যেসকল সদস্য মারা গেছেন, এটার জন্য শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ দায়ী।
বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভেঙে ফেলাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আজকে একজন বড়মাপের নেতার মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে; এটার জন্য শেখ হাসিনা দায়ী।
তিনি আরো বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা সমর্থন করি। আমরা এই বিপ্লবের একটি সঠিক পরিণতি চাই। আওয়ামী লীগের মতো কোনো কলঙ্ক যাতে তাদের স্পর্শ করতে না পারে।
বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শ নিয়ে কাজ করব। আমরা আওয়ামী লীগের মতো হতে চাই না।
১৩.
জবির সমন্বয়ক থেকে সরে গেলেন নূর নবী
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ইউনিটকে নেতৃত্ব প্রদান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নূর নবী সমন্বয়ক পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সমন্বয়ক থেকে সরে গেলেও যেকোনো আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে তার নিজ ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন নূর নবী।
পোস্টে নূর নবী লেখেন, আমি মো. নূর নবী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক হিসেবে শুরু থেকেই সকল আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। এক্ষেত্রে আমাদের প্রাথমিক চাওয়াগুলো পূরণ হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমাদের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শহীদরা যে রক্ত দিয়েছেন তা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। শহীদদের আত্মত্যাগে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশে যেকোনো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করব, ইনশাআল্লাহ।
এই সমন্বয়ক আরও লেখেন, আজ থেকে আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। ব্যক্তি স্বার্থবিহীন এই আন্দোলনে শুরু থেকেই মাঠে থেকেছি। ময়দানে ছাত্রলীগের বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়েছি, ময়দান থেকেই গুম হয়েছি এবং পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি, কারাগারে গিয়েছি। এসব কিছুর ঊর্ধ্বে আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছি। সে ভালোবাসার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য আমি সর্বদা আপনাদের পাশে থাকব, ইনশাআল্লাহ।
এ বিষয়ে নূর নবী বলেন, আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে “জবি সংস্কার আন্দোলন” নামে একটি প্ল্যাটফরম করে প্রতিটি বিভাগ থেকে গণতান্ত্রিক উপায়ে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে নেতৃত্ব গঠন করা হবে। আমি মনে করি, আমাদের ক্যাম্পাসে আর সমন্বয়ক প্রয়োজন নেই।
তিনি আরও বলেন, তা ছাড়া খুব সম্ভবত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের ক্যাম্পাস লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিমুক্ত থাকবে। সে জন্য আমি আগে আগে আমাকে সরিয়ে নিয়েছি এই জায়গা থেকে।
কোটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া কেন্দ্র করে গত ১৯ জুলাই ক্যাম্পাস গেট থেকে গ্রেপ্তার হন নূর নবী। পরে ডিবি অফিসে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ৬ আগস্ট মুক্তি পান। নির্যাতনকালে পানিতে মরিচের গুড়া মিশিয়ে খেতে দেওয়া হয়েছিল তাকে। গোপনাঙ্গে আঘাতসহ ব্যাপক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে গত ৯ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে এই চিত্র তুলে ধরেন। এমনকি ডিবির হারুন তাকে ক্রসফায়ার দেওয়ারও কথা বলেছিলেন বলে জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বেগবান করতে গত ২৯ জুলাই ২৭ সদস্যের অফিসিয়াল সমন্বয়ক প্যানেল ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ইউনিট। সেখানে প্রথমে নাম ছিল নূর নবীর।
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে নেমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ সমন্বয়ক পদত্যাগ করেন।
১৪.
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে জালেমের সরকার কায়েম করেছে : মঈন খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে জালেমের সরকার কায়েম করেছে। তার প্রতিবাদ করার জন্য এ তাহমিদ রাজপথে তার তাজা রক্তে ঢেলে দিয়ে শহীদ হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ছাত্র জনতা বাংলাদেশের তথাকথিত কলুষিত রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত তাহমিদ ভূঁইয়ার কবর জিয়ারতকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। বাংলাদেশে যত স্বৈরশাসকই আসুক, যারা গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে তাদের পরাজিত করে ছাত্র জনতা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।
তিনি বলেন , যে আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ধারক বলে দাবি করে, সেই আওয়ামী লীগ যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে, এক নায়কতন্ত্র কায়েম করে, বছরের পর বছর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ন্যায় নীতিকে ক্ষুণ্ন করেছে।
ড. মঈন খান তাহমিদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর চিনিশপুরের পারিবারিক কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং তাহমিদের বাবার হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন।
এছাড়া নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত পলাশের আমজাদ হোসেনের কবর জিয়ারত ও নিহতের পরিবারের হাতে নগদ আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন ড. আব্দুল মঈন খান।
এ সময় পলাশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এরফান আলী, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নরসিংদী জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান, পলাশ উপজেলা যুবদলের সভাপতি নিছার আহমেদ খান ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আলম মোল্লাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।