আওয়ামী লীগের জঞ্জাল সরকার অর্থনীতি নষ্ট করেছে : মেজর হাফিজ
বিশেষ সংবাদদাতা :
আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে চান বলে জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বন্যার্তদের পাশে থেকে কাজ করার চেষ্টা করছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের জঞ্জাল সরকার অর্থনীতি নষ্ট করেছে। আয়নাঘর করে গুম-খুন করা আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় এনে বিচারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে চাই আমরা। উপযুক্ত সময়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করবে এই সরকার।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে এগারোটায় বরগুনার সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনি ও অন্যান্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বুকের রক্ত ঢেলে গণতন্ত্রের পথ সুগম করেছে ছাত্ররা। জুলাই বিপ্লব এর আদর্শ বাস্তবায়ন করব। প্রতিহিংসা নয় বরং জনগণকে সাথে নিয়ে আইনের মধ্যে থেকে সবাইকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষা করা এই সরকারের অন্যতম কাজ হবে।
ভারতের সমালোচনা করে হাফিজ বলেন, অন্যায়ভাবে বাধ নির্মাণ করেছে ভারত। যে কারণে কৃষকরা পানি পায়নি। তাদের ক্ষতি করেছে। জনগণের রায় নিয়ে নদীর ন্যায্য হিসাব নিশ্চিত করবে বিএনপি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করায় বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমরা যারা রাজনৈতিক দল আছি আমরা ড. ইউনূসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
তিনি আরো বলেন, আশা করি তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে বর্তমান সরকার। সেজন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে সময় ও সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমরা কোনো প্রতিহিংসা নিতে চাই না। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন আমরা কোনো ধরনের প্রতিহিংসা চাই না। জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাউকে শাস্তি দিতে হলে আইনের মাধ্যমে হবে। কোনোভাবেই আইন হাতে নেবেন না, আমরা চাই বাংলাদেশ যেন সুন্দর একটি রাষ্ট্র হয়। আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন দেখতে চাই।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমরা প্রত্যেকটি স্থানে ত্রাণ দল পাঠিয়েছি। যতটুকু সম্ভব আমরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দুঃখ কষ্টের ভাগী হওয়ার চেষ্টা করেছি।
মেজর হাফিজ বলেন, একটি ব্যতিক্রমী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও বিরোধী দলসমূহ তাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের বিনিময়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়েছেন। ছাত্র জনতা ও রাজনৈতিক দলসমূহ মিলে প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা এই সরকারকে সাহায্য সহযোগিতা করব।
এই নেতা বলেন, আজকে জিয়াউর রহমানের মাজারে এসেছেন বরগুনা থেকে বারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি। এই জননেতা আগামী দিনে বরগুনাকে আরও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আজকে আমরা এ অন্তর্র্বতীকালীন সরকার পেয়েছি। বিএনপির ১৬ বছর আগে এ আন্দোলন শুরু করেছিল। আমাদের শত শত কর্মী খুন হয়েছে, হাজার হাজার কর্মী জীবন দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের ওপর যে ধরনের অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, এ বিশ্বে তার কোনো নজির নেই। এবং আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে কোটা আন্দোলনে মাঠে নেমেছে ছাত্র জনতার দল। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ ও অভিবাদন জানাই। তারা বুকের রক্ত ঢেলে এদেশে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছে। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ যারা শহিদ হয়েছেন তাদের সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, ছাত্রজনতার সর্বশেষ আন্দোলনে বিএনপির ১৯৮ জন নেতাকর্মী শহিদ হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সারা দেশে নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে ভেবেছিল কেয়ামত পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বীরের জাতি। কত সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছি। এবার জুলাই বিপ্লবেও স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা দুবার স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
বন্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫৪টা নদী ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে। একটি নদীতে অন্যায়ভাবে ভারত বাঁধ দিয়ে রাখছে। এরপরে আমাদের কৃষকরা ন্যায্য পানি পাচ্ছে না।
এসময়ের ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।