তরুণরা আমাদের যে স্বপ্ন দেখিয়েছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা

Published: 24 August 2024

বিশেষ সংবাদদাতা :


বন্যা মোকাবিলা ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে ছোট-বড় ও স্থানীয় ৪৪টি এনজিওর সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।বৈঠকে তিনি বলেন, এনজিওরা বাংলাদেশে শক্তি। তরুণরা আমাদের যে স্বপ্ন দেখিয়েছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। ইউ ক্যান ডু ইট।

শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকালে প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবন ও কার্যালয় যমুনায় এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম এ কথা জানান।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড় ও স্থানীয় ৪৪টি এনজিও’র প্রতিনিধিদের প্রায় দু-ঘণ্টা প্রাণবন্ত বৈঠক হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা, পরবর্তী করণীয় এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, বন্যার পানি নামার পরবর্তী যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে পানিবাহিত রোগ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও খাদ্য ও পুনর্বাসন ব্যবস্থায় সমন্বিত উদ্যোগে একযোগে কীভাবে কাজ করা যায়।

প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশ মানুষ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে কাজ করেছিল, ঠিক একইভাবে তারা বন্যা মোকাবিলায় কাজ করছে। পাড়া-মহল্লায়, গ্রাম-গঞ্জে ত্রাণ তুলে বানভাসি মানুষের সহায়তায় কাজ করছে। তিনি বলেছেন, তরুণদের যে উদ্যোগ, তরুণদের প্রেরণা নিয়ে বাংলাদেশের সব মানুষ যেন একত্রিত হয়ে বন্যা মোকাবিলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

ড. ইউনূস বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশে এনজিওদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে কাজ করে থাকে। আমরা তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কাজ করতে চাই। শিক্ষার্থীরা যদি ত্রাণ সহায়তা নিয়ে পরশুরামে গিয়ে দেখে যে, সেখানে স্থানীয় এনজিও কাজ করছে, তখন শিক্ষার্থীদের তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে সহজ হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পানির নামার পরই মূল কার্যক্রম। পানিবাহিত রোগ, খাদ্যের ঘাটতি, ঘরবাড়ি পুনস্থাপন এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। তাই এনজিওদের সঙ্গে নিয়ে এসব কাজ করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি— বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করার। মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রয়োজনে যাতে ডিজেল পাঠিয়ে টাওয়ারগুলো সচল করা যায়। যতটা সম্ভব প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়া যায়। এবং যত দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়। তাহলে দ্রুত মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা যাবে। কেননা, ওইসব জেলার বেশির মানুষ বিদেশে থাকে। তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। আর ত্রাণ বিতরণ এবং পুনর্বাসন একসঙ্গে চালু করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এখনই সমন্বিতভাবে স্বাস্থ্য ও খাদ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী সমন্বয় করে ত্রাণ পাঠাতে হবে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ দ্রুত পুনঃস্থাপনে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে।

বন্যা মোকাবেলায় দেশের মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তাতে অভিভূত জানিয়ে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, সমন্বিতভাবে স্বাস্থ্য ও খাদ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফান্ড মোভিলাইজ করতে হবে।

এদিকে শনিবার (২৪ আগস্ট) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা রাজ্যে বৃষ্টি কমে এসেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এলাকাগুলোর ছয়টি নদীর নয়টি স্টেশনের পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার নদীর পাঁচটি স্টেশনে এখন পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। উজানের নদ-নদীর পানি কমে যাচ্ছে। ফলে এখন মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি শুক্রবার (২৩ আগস্ট) থেকে উন্নতি হচ্ছে।

এদিকে, ছয় নদীর নয়টি স্টেশনে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেগুলো হলো অমরশীদ (কুশিয়ারা নদী) ১৪ সেন্টিমিটার, শেওলা (কুশিয়ারা) ১, শেরপুর-সিলেট (কুশিয়ারা) ৯, মারকুলী (কুশিয়ারা) ৪, মৌলভীবাজার (মনু) ৯১, বাল্লা (খোয়াই) ৪৪, কুমিল্লা (গোমতী) ৯৬। এ ছাড়া রামগড় (ফেনী) ও পরশুরাম (মুহুরী) যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে হবিগঞ্জ (খোয়াই), মনু রেলওয়ে ব্রিজ (মনু), দেবিদ্বার (গোমতী), নারায়ণহাট (হালদা) ও পাঁচপুকুরিয়া (হালদা) স্টেশনের পানি।

প্রসঙ্গত, টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশ। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে দেশের ১১টি জেলা। ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।