জামায়াত নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে মঙ্গলবার
বিশেষ সংবাদদাতা :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া প্রজ্ঞাপন মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) প্রত্যাহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে হাইকোর্টের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি।
শিশির মোহাম্মদ মনির বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি মঙ্গলবারের (২৭ আগস্ট) মধ্যে জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বাতিল হবে। শুধুমাত্র গণঅভ্যুত্থানের কর্মকাণ্ডকে ভিন্নখাতে নিতেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়।
শিশির মনির বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সেনা দপ্তরে এবং রাষ্ট্রপতির ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করার সময় জামায়াতে ইসলামী তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অর্থাৎ, বর্তমান সরকার এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সঙ্গে জামায়াত অন্যান্য স্বাভাবিক দলের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলো সেটা আমরা জানি না। মনে করছি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ ফ্যাসিবাদী এই সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে। জামায়াতে ইসলামীও সহযোগী শক্তি হিসাবে ভূমিকা রেখেছে। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহারের পরই দলটি নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল বিভাগে মামলা পুনরুজ্জীবনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত ১ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী, ছাত্রশিবির ও সংশ্লিষ্ট সব অঙ্গসংগঠন নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া কয়েকটি মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ-সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে রায়ের আলোকে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রহিয়াছে যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ-সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল। যেহেতু সরকার বিশ্বাস করে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ-সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, সেহেতু সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ধারা ১৮ (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সব অঙ্গ-সংগঠনকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং উক্ত আইনের তফশিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সব অঙ্গ-সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।