উপদেষ্টাদের মামলা প্রত্যাহার হলেও হয়নি বিএনপি নেতাকর্মীদের : মির্জা ফখরুল

Published: 26 August 2024

বিশেষ সংবাদদাতা :


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও আরেক উপদেষ্টার নামে মামলা প্রত্যাহার হলেও বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ১ লাখে ৪৫ হাজার মামলার একটাও তুলে নেয়া হয়নি।

সোমবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টি একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ইতিবাচক মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করুন। বিএনপি নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।

আন্তর্জাতিক আইন থাকা সত্ত্বেও ভারতের বাঁধ খুলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ডুবিয়ে দেওয়া একটা ক্রিমিনাল অফেন্স বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যিনি বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে আছেন তিনি বরেণ্য ব্যক্তি। তার ওপর দেশের মানুষের আস্থা আছে তাদের কাছে প্রত্যাশা আকাশ সমান। যত জঞ্জাল আছে সেগুলো সাফ করে তারা একটা সুন্দর নির্বাচন দেবেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন কবে নির্বাচন হবে সেটা দেশের মানুষ ঠিক করবে কিন্তু তার জন্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাদের কথা বলতে হবে। তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশি স্টেট আর হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার মামলাগুলো যেমন তুলে নেওয়া হয়েছে একইভাবে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নামে থাকা মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে।

তিনি বলেন, আনসারদের যে তৎপরতা তা ভালো লক্ষণ নয় পরাজিতরা এধরনের কাজ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে থাকতে পারে। এভাবে সচিবালয় ঘেরাও করে এই মুহূর্তে কোনো দাবি আাদায়ের চেষ্টা কোনো পক্ষেরই করা উচিত নয়, কেউ করবেন না।

অযথা বলপ্রয়োগ করে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য না করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনও এই সরকারের ভেতরে আগের ফ্যাসিস্টের দোসর রয়েছে তাদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে নইলে জাতি ক্ষমা করবে না।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু তুলে ধরেননি। আশায় ছিলাম। নির্বাচন হতেই হবে। তবে সংস্কার করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবেন সেটা পাওয়া যায়নি যদিও তাদের জন্য এত অল্প সময়ে সেটা দেওয়া সহজ নয়। এখনও বলছি নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় তাদের দিতে চাই। বিএনপি বিশ্বাস করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই দেশে নির্বাচন হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাধীন-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা চলছে। ১৫ বছর ধরে চলা রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে জয়লাভ হয়েছে। ছাত্র-জনতা সর্বস্তরের মানুষের সফল অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের পতন ও শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া এটা বড় বিজয়।

তিনি আরও বলেন, দেশে বন্যা হচ্ছে এটা হতেই পারে, তবে যেভাবে বন্যার পানি এসেছে, এটা ক্রিমিনাল অফেন্স। ভারত তাদের বাঁধ ছেড়ে দিয়েছে কোনো ঘোষণা না দিয়ে। ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের সতর্ক করার দরকার ছিল, সেটা তারা করেনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, সংকট না, ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি বিপ্লবের মধ্যদিয়ে। অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের প্রতি আস্থা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ সরকারের কাছে দেশের মানুষের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা। প্রধান উপদেষ্টা গতকাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। বলেছেন নির্বাচন কবে হবে, তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত- এ কথা জানিয়ে নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্তে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনার উদ্যোগ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা আর এ দেশকে পুলিশি রাষ্ট্র করতে দিতে চাই না। বিএনপির সকল গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অবিলম্বে তুলে নিতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল সচিবালয়ে আনসারদের ঘেরাও কর্মসূচি ও পরে গোলযোগ তৈরির চেষ্টা এটা অশনি সংকেত। যারা পরাজিত তারা এখনও চক্রান্ত করছে, বিজয়কে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য। জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সচিবালয় ঘেরাও করে কোনো কিছু আদায়ের চেষ্টা করবেন না, জনগণ ভালো চোখে দেখবে না। দেশে সকল পরিবর্তন এনেছে ছাত্ররা। আমি শিক্ষক হিসেবে আহ্বান জানাতে চাই, অযথা বলপ্রয়োগ করে কোনো কিছু করবেন না।

তিনি বলেন, প্রশাসনে এখনও সেই সমস্ত ব্যক্তিকে দেখছি, যারা আওয়ামী লীগ সরকারকে মদদ দিয়েছে, হত্যায় সহযোগিতা করেছে। প্রশ্নবিদ্ধ মানুষদের প্রশাসন থেকে সরিয়ে দিতে হবে। অনতিবিলম্বে দেশপ্রেমিক মানুষকে নিয়ে সরকার চালাতে হবে।

সবাইকে ধৈর্য ধারণ ধরতে হবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যে সরকার এসেছে তারা অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। তাদেরকে সে সুযোগ দিতে হবে। আমরা তাদের যৌক্তিক সময় দিতে চায়। এবং তাদের নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনে যদি আগের মত অবস্থা সৃষ্টি হয় তাহলে সেটা জনগণ মেনে নিবে না। সেইজন্য জনগণ অপেক্ষা করছে। সেটা হবে যৌক্তিক সময় পর্যন্ত।

স্মরণ সভায় জাতীয় পার্টি সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দেশ শাসন চলেছে। বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী দেশকে ধ্বংস করে দেশ ছেড়েছেন। তার দোসররা এখন দেশকে অস্থিতিশীল করতে আনসার বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত বিনা নোটিশে বাঁধ খুলে দিয়েছে। এই বন্যাকে আমি আশীর্বাদ মনে করেছি। কারণ বন্যা আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ করেছে।