স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও নজরুলের গান-কবিতা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে : রিজভী
বিশেষ সংবাদদাতা :
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও নজরুলের গান-কবিতা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এছাড়া গত সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই ভারত বাঁধ খুলে দিয়ে দেশে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে এসে এসব কথা বলেন তিনি।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ। সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়। শ্রদ্ধা জানাতে কবির সমাধিতে আসেন কবি পরিবারের সদস্যরাও।
সকাল থেকে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে জাতীয় জাদুঘর, নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ, নজরুল একাডেমি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সুরসপ্তক, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও বাঁশরী- একটি নজরুল চর্চা কেন্দ্রসহ আরও ব্যক্তি ও সংগঠন।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন, আমাদের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা এবং জনতা সম্মিলিতভাবে এক ভয়ংকর দানবীয় স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে। সেই আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে আপনারা শুনেছেন, কারার ঐ লৌহকপাট। যখন কারাগারে যাই, নজরুলের গান গাই। আমরা যখন মিছিল করি, নজরুলের গান গাই। আমরা যখন স্লোগান দেই, নজরুল আমাদেরকে প্রেরণা দেয়।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রিজভী বলেন, আমরা তার সাহিত্যের মধ্য দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বঞ্চনার বিরুদ্ধে কীভাবে মুক্তি লাভ করা যায় তা শিখেছি। একদিকে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা বলেছেন, অপরদিকে তিনি চির প্রেমের কবি। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত কয়েকদিন আগে এক ভয়ংকর দানবীয় স্বৈরশাসকের পতন ঘটেছে। সেই আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে আপনারা শুনেছেন ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দ্যম মোরা ঝর্ণার মতো চঞ্চল’। আন্দোলনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা আত্মদান যারা করেছেন, তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন নজরুলের গান গেয়ে, নজরুলের গান শুনে। আজও আমাদের অত্যাচারী বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রেরণা দেয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনা অসম চুক্তির মাধ্যমে জনগণকে বন্দী করে, তাদের প্রভুদেরকে ডেকে এনে নিজেদের নিরাপত্তা ও অবৈধ ক্ষমতা নিশ্চিত করেছেন। আজকে বাঁধ খুলে দিয়ে প্রলয়ঙ্করী বন্যার সৃষ্টি করেছে। আবার শুকনো মৌসুমে আমাদের যখন পানির দরকার তারা (ভারত) তখন গেট বন্ধ করে রাখে। একটি ব্যক্তির (শেখ হাসিনা) ১৬/১৭ বছর নতজানু নীতির কারণে এটি হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতকে ইঙ্গিত করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এই স্বৈরশাসককে একমাত্র যে দেশটি (ভারত) সমর্থন করে এসেছে, তারা বাংলাদেশের জনগণ কী চায় তার দিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি। কয়েকদিন আগে তারা ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিয়ে প্রলয়ঙ্করী বন্যার সৃষ্টি করেছে। গতকাল ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়ার সংবাদ শুনেছি। মনে হচ্ছে, একটি পরিকল্পিত ও অশুভ ইচ্ছা নিয়েই তারা এই কাজগুলো করছে।
তিনি বলেন, শুকনো মৌসুমে আমাদের যখন পানির দরকার তারা তখন গেট বন্ধ করে রাখে। পানির যে শেয়ার সেই শেয়ারটুকু আমরা যেন না পাই সেজন্য শেখ হাসিনা অসম চুক্তির মাধ্যমে তা করেছেন। একটি ব্যক্তির ১৬ -১৭ বছর নতজানু নীতির কারণে এটি হয়েছে। নিজের জনগণকে বন্দী করে, জনগণের উপর পাথর চাপিয়ে তারা এই কাজটি করেছে। তাদের প্রভুদেরকে ডেকে এনে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, অবৈধ ক্ষমতা নিশ্চিত করেছে।
সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে কিন্তু তার পোকামাকড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। প্রতিবিপ্লব তৈরি করার চেষ্টা করছে, ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরশাসকের দোসররা। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যে মুক্তির আস্বাদ পেয়েছি, মুক্ত বাতাস নিতে পারছি সেটি আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। আর যাতে কোনো স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়ে সব কিছুকে ভেঙে দিতে না পার। এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান যেগুলো স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত হওয়ার কথা সেগুলোকে শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন নিজের কব্জায় রেখেছে। নির্বাচন কমিশনে ফ্যাসিবাদের একনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এখনো রয়েছে। এরাই নির্বাচন কমিশনের যে স্বাধীনতা সেটি শেখ হাসিনার পদতলে অর্পণ করেছে। এখনো প্রশাসনের নানা জায়গায়, নানা প্রতিষ্ঠানে যে পোকামাকড়গুলো রয়েছে সেগুলোকে দূরীভূত করতে হবে এবং সত্যিকারের জনগণের শাসনকে প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের কাজ করতে হবে।
খালেদা জিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজের উপর নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও গণতন্ত্রের পতাকাকে তিনি উড্ডীন করেছেন। কোনো অপশক্তি বা অগণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে দাঁড়াননি। সবসময় জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আজকের এই দিনে তাকেও শ্রদ্ধা জানাই। কারণ, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে যে বাণী নজরুল দিয়েছিলেন সেটিকে বেগম খালেদা জিয়া বুকে ধারণ করে দীর্ঘদিন তিনি লড়াই করেছেন।’