কোনো ধর্মের ওপর জোর-জবরদস্তির এখতিয়ার আল্লাহ কাউকে দেননি: জামায়াত আমির
বিশেষ সংবাদদাতা :
কোনো ধর্মের ওপর জোর-জবরদস্তির এখতিয়ার আল্লাহ কাউকে দেননি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক ঐক্য ফ্রন্ট আয়োজিত কবি, লেখক ও শিল্পী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরা বিগত আন্দোলনে দেখেছি দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা পাহারা দিয়েছে মাদ্রাসা ছাত্ররা। পাহারা দিয়েছে ইসলামী দলের লোকেরা। এটা তো তাদের প্রতিষ্ঠান নয়। তারা জানেন অন্য লোকদের ধর্ম চর্চার অধিকার আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। তবে সঠিক রাস্তাও জানিয়ে দিয়েছেন। কারও ওপর, কোনো ধর্মের ওপর কোনো জোর-জবরদস্তির এখতিয়ার আল্লাহ কাউকে দেননি। ধর্ম যারা যার নিজস্ব পছন্দ। ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে বিভাজিত করার অধিকার কারও নেই।
জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের আবাসভূমি। এদেশের ৯০ থেকে ৯১ শতাংশ মানুষ ইসলামে বিশ্বাসী। বাকি অন্য ধর্মের যারা আছেন তাদের আমরা সম্মান করি। এ বিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশ হচ্ছে ধর্মীয় সম্প্রতির এক বৈচিত্র্যময় লীলাভূমি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিশ্বাসের প্রকাশ হচ্ছে সংস্কৃতি। অতএব সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে বিশ্বাস নয়; আবার আমার বিশ্বাসকে দূরে রেখে সংস্কৃতি নয়। যারা নিজস্ব বিশ্বাস ও সংস্কৃতি ভুলে অন্যেরটা অনুসরণ করে তারা কোনো সময় অগ্রসর হতে পারে না। আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন জাতি হতে পারে না এবং তারা দেশ জাতিকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়। তাই আমাদের নিজস্ব বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও শিকড়কে আঁকড়ে ধরে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে আমাদের বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই আমাদের সংস্কৃতি আবর্তিত। আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের উন্মুক্ত আবাসভূমি। একটি বৈচিত্র্যময় মেলবন্ধন এদেশে রয়েছে। এখানে আমরা সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। বিগত ছাত্র জনতার আন্দোলনেও আমরা দেখেছি কোনো দুষ্টচক্র এই সম্প্রীতির বন্ধনকে নষ্ট করেতে না পারে সেজন্য দেশের সব মন্দির, চার্চ, গির্জাগুলো মাদরাসার ছাত্ররা দিনরাত পাহারা দিয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে। কিছু দুষ্কৃতকারী অপরাধ সংঘটিত করে বৃহৎ গোষ্ঠীর ওপরে দোষ চাপিয়ে দিতে চায়, সেই সব সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় সংস্কৃতিকভাবে আমাদেরকে দৃঢ়তা প্রদর্শন করে সবার অন্তরে স্থান করে নিতে হবে। সম্প্রতি আমরা সকল ধর্মের মানুষের সাথে মতবিনিময় করেছি। আমরা বলেছি, আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশি, সকলে মিলে সুখে শান্তিতে আমরা বাংলাদেশে বসবাস করতে চাই।
তিনি বলেন, কবি, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির জাগ্রত বিবেক। আপনাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের নিজস্ব বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। অথচ, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ইসলামী আদর্শ ও মুসলিম চেতনা লালন করে জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ফলে এদেশের মানুষের কাছ থেকে ইসলামী বিশ্বাসের চিন্তা ভুলিয়ে দেওয়া সহজ নয়। ইসলামের শিকড় এদেশের মানুষের অনেক গভীরে মিশে আছে। বাংলাদেশের সবুজ জমিনে ইসলাম হাজার বছরের বটবৃক্ষ হয়ে অবস্থান করছে। ইচ্ছে করলেই কোনো অপশক্তি এটাকে উপড়ে ফেলতে পারবে না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি দেশের গণমাধ্যম। সাংবাদিকেরা এখন তাদের বিবেক অনুযায়ী কাজ করবে। চিন্তার জগতে কোনো আপোষ নেই। সত্য প্রকাশে কাউকে পরোয়া করার সুযোগ নেই।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল। কবি মোশাররফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে এবং সাংস্কৃতিক ঐক্য ফ্রন্টের সেক্রেটারি মাহবুব মুকুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন ও মুহা. কামাল হোসাইন।