জনগণই ঠিক করবে আগামীতে কারা সরকারে : তারেক রহমান
বিশেষ সংবাদদাতা :
আগামীতে কারা সরকার গঠন করবে, বাংলাদেশের জনগণই তা ঠিক করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল অডিটরিয়ামে দক্ষিণ, উত্তর ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার পতন, গণতন্ত্রকামী জনগণের দীর্ঘ আন্দোলনের বিজয়। নিকট অতীতে স্বৈরাচার ছিল দৃশ্যমান গণ-নিপীড়নকারী আর এখন স্বৈরাচারের দোসররা অদৃশ্য শক্তিরূপে জনতার বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমান প্রতিপক্ষের চাইতে অদৃশ্য শত্রুরা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। দৃশ্যমান প্রতিপক্ষকে আমরা চিনি, তাদের আক্রমণের ধরনও আমাদের পরিচিত। কিন্তু অদৃশ্য শত্রুরা অচেনা, আর সর্বত্র তাদের অবস্থান এবং তাদের কৌশলও চোরাগুপ্তা। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন সবাইকে আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে এবং কঠোর হতে হবে। যখন সুযোগ ছিল তখন বিএনপি নারীদের নিরাপত্তায়, কৃষকের উন্নয়ন থেকে শুরু করে দেশের সর্বক্ষেত্রে অবদান রাখার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
তারেক রহমান বলেন, বিগত ৫ আগস্টের পর জনগণের চিন্তা ধারায় পরিবর্তন ঘটেছে। বিএনপিকেও মানুষের এই চিন্তা ধারার সাথে পরিবর্তিত হতে হবে। মনে রাখতে হবে বিএনপি বিরোধী দলে ছিল। এখনো বিরোধী দলে আছে, যতক্ষণ জনগণ আমাদের পক্ষে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ না করবে। তাই জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য দলের নেতাকর্মীদের কথাবার্তা ও কাজকর্মে সতর্ক হতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। শহীদ জিয়ার এই স্লোগানটিকে শুধু স্লোগান হিসেবে বিবেচনা না করে প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর মনে তা ধারণ ও বিশ্বাস করতে হবে। তবেই আমাদের দল কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন করতে পারবে। যারা নিজেকে চালাক মনে করছে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। শহীদ জিয়ার স্লোগান ছিল- জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। এটিকে শুধু স্লোগান হিসেবে বিবেচনা না করে প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর মনে তা ধারন ও বিশ্বাস করতে হবে। তাহলেই আমরা অর্জন করতে পারব কাক্সিক্ষত ফলাফল। অনেকেই ভাবছেন স্বৈরাচার পতনের পর মাঠে তাদের আর কোনো অবস্থান নেই। এ রকম ভাবসাব অনেকের মধ্যে দেখা যায়। যার পতন হয়েছে সে ছিল আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। আজ তারা হয়ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু এতে আমাদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। কারণ আগে আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল দৃশ্যমান। এখন আমাদের প্রতিপক্ষ অদৃশ্য। তারা আপনাকে এবং দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাদের বিষয়ে সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় সতর্ক থেকে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। এই বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। স্বৈরাচার পতন আমাদের জন্য প্রিটেস্ট এবং জনগণের আস্থা অর্জন আমাদের জন্য টেস্ট পরীক্ষা। মনে রাখতে হবে আমাদের দলের বিরুদ্ধে ভিন্ন উপায়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের প্রতারিত করে দলে অনুপ্রবেশ করে ভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তারেক রহমান বলেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আমাদের মধ্যে অনেকেই ভুল করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দল পিছপা হয়নি। আমরা সরকারে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতাম। দেশনেত্রীর স্লোগান- মানুষ বাচাঁও দেশ বাচাঁও। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব বিএনপির। তাই দলের প্রত্যেকটি নেতাকর্মী নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করুন। যে জনগণ আপনাদের পক্ষে রায় দেয়। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া সহজ হবে না বরং আমাদের লক্ষ্য অর্জন অতীতের চেয়ে অনেক কঠিন হবে। তাই দলের নেতাকর্মীদের অতন্ত্র প্রহরী হিসাবে কাজ করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আফজাল এইচ খান, সহ-সাংগঠনিক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, সাবেক এমপি শাহ নূরুল কবীর শাহীন, আবু রেজা ফজলুল হক বাবলু, আবুল বাশার আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কাজী রানা, শাহ শিব্বির আহম্মেদ বুলু, একেএম মাহাবুবুল আলম, শামীম আজাদ, ফারজানা রহমান হুসনা, লিটন আকন্দ, এম.এ হান্নান খান, কায়কোবাদ মামুন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফকরুদ্দিন আহম্দে বাচ্চু, আকতারুজ্জামান বাচ্চু, আকতারুল আলম ফারুক, ফাত্তাহ খান, আবুল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।