‘সরকারের ভুল-ত্রুটি নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা’

Published: 3 September 2024

বিশেষ সংবাদদাতা :


অন্তর্বরর্তী সরকারের ভুল-ত্রুটি নির্দ্বিধায় গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলে জানিয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৫৭ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সবাইকে মুক্ত করেছেন। এটা অত্যন্ত আনন্দের খবর।

মাহফুজ আনাম বলেন, আজকের আলোচনায় অংশ নেওয়া সম্পাদকরা অন্তর্র্বতী সরকারের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আমরা চাই একটা নতুন দিগন্ত বাংলাদেশে উন্মোচিত হোক। আমি একজন সম্পাদক হিসেবে একটা প্রশ্নটা উপস্থাপন করেছি সেটা হলো সাংবাদিকতার নিশ্চয়তা। সাংবাদিকদের নামে যত্রতত্র খুনের মামলা হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করা। কারও যদি দোষ থাকে, যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে মামলা হবে কিন্তু এভাবে যেন না হয়।

মাহফুজ আনাম বলেন, বিটিভি, বিএসএস এবং রেডিও, যেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে সেগুলোকে স্বায়ত্ত শাসন দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। তারা যেন পেশাগতভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সারাবিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা উৎসুক বাংলাদেশকে সহায়তা করতে।

দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক বলেন, আমরা কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আশা করছি। সেই সংস্কারের মধ্যে সংবিধান পরিবর্তন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো, এন্টি করাপশন কমিশন, হিউম্যান রাইটস কমিশন, নির্বাচন কমিশন এগুলোকে সংস্কার করা। সত্যিকার অর্থে গণমুখী সংস্থা আমরা চাই। নির্বাচন কমিশন যাতে ভবিষ্যতে ভোটারদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটান, এরকম একটা সংস্থা চাই। আমরা এমন দুর্নীতি দমন কমিশন, তারা যেন স্বাধীন ভাবে দেশের দুর্নীতি দমন করতে পারে।

সাংবাদিকতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, সাইবার সিকিউরিটি আইনের মধ্যে সাংবাদিক নিপীড়নের যে অধ্যায়গুলো আছে সেগুলো কার্যত হবে না। এমনটা যাতে ঘোষণা করা হয়। এটা সংস্কারের জন্য ওনারা সময় নিয়ে করতে পারেন। তিনি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন সাংবাদিকতা বিশ্বাস করেন। আমাদেরকে যে বিশেষ আবেদন করেছেন, আমরা যেন আমাদের লেখনীর মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। এ সরকারের ভুল ত্রুটি সোচ্চার ভাবে, নির্দ্বিধায় সেটা যেন কাগজে ছাপি। এই সরকারকে সাহায্য করি।

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সত্যিকার অর্থে মিডিয়ার স্বাধীনতা বিশ্বাস করেন। মিডিয়াবান্ধব যদি কোনো সরকারপ্রধান আমরা পেয়ে থাকি, তাহলে আমরা এখন পেয়েছি। আমরা এর জন্য অত্যন্ত আনন্দিত। সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা যদি মনে করেন যে, একটা গ্রুপ করে দেওয়া বা একটা বিশেষ কমিটি করে দিয়ে সব ধরনের আইনের যে পরিবর্তন করা হয়। আমারও সংবিধান সংস্কার চাই। আমরা গণতান্ত্রিক রিফর্ম চাই।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে এগুলো তার সরকারের কোনো পলিসিগত কিছু না।

মাহফুজ আনাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন থাকবে সেটা সম্পাদকদের কাছে জিজ্ঞেস করেছেন ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস। সে বিষয়ে অনেকের মতামত দিয়েছেন। তবে এই সরকারের মূল অ্যাজেন্ডা কী? সেটার অনুপাতে সময়। ২,৩, ৫ বছর, ওনার নিজস্ব কোনো চিন্তা নেই। জাতি কী চায়? জনতা কী চিন্তা করছেন? সেটা তিনি জানতে চান। তিনি মিডিয়াকে আহ্বান করেছেন। আমরা যেন জনগণের কথা লিখি।

মাহ্ফুজ আনাম বলেন, আমরা সম্পাদকরা চাই, দেশে একটি জাতীয় ঐক্য স্থাপিত হোক। বৈঠকে আমরা সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যত্রতত্র খুনের মামলা বন্ধ করতে বলেছি। এ ব্যাপারে সরকার যেন সুস্পষ্ট একটি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করেছি। সাংবাদিকদের যদি কোনো রকম দোষ থাকে, তারা যদি দুর্নীতিতে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হবে কিন্তু এভাবে যেন না হয়।