সব সংস্কার কাজ অন্তর্বর্তী সরকার করলে তো জনগণ ও সংসদের দরকার নেই : মির্জা ফখরুল

Published: 16 September 2024

বিশেষ সংবাদদাতা :


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের সব সংস্কার কাজ যদি অন্তর্বর্তী সরকার করে তাহলে তো জনগণ ও সংসদের দরকার নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা জনগণ মানবে না। নির্বাচিত সরকারই ঠিক করবে কী সংস্কার হবে, পার্লামেন্টেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সংবিধান পরিবর্তন হবে কিনা।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ‘দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট: উচ্চকক্ষের গঠন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি মহল কাজ শুরু করে দিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় রাখতে। তারা নাকি একবারে দেশটাকে সংস্কার করে দেশটাকে পরিবর্তন করে ফেলবে। তাহলে তো জনগণের দরকার নেই পার্লামেন্টের দরকার নাই। একটি পত্রিকায় ব্র্যাক ইনস্টিটিউট জরিপ করে দেখিয়েছে যতদিন খুশি এই সরকার থাকুক। আমি জানিনা তারা কিভাবে এই জরিপ করলো। কিন্তু জনগণ তো এটা মেনে নেবেনা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেন। জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হলে অবশ্যই পার্লামেন্ট প্রয়োজন। পার্লামেন্ট না হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবেনা। ফলে দ্রুত অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর সেই সরকার সিদ্ধান্ত নিবে কোথায় কোন জায়গায় পরিবর্তন করতে হবে। তখন সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে নাকি সংশোধন হবে সেটা সংসদ সিদ্ধান্ত নিবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার এই দেশে ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান নষ্ট করে ফেলছে। নির্বাচন করার জন্য নূন্যতম যে সংস্কার প্রয়োজন তা করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করে প্রয়োজন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্র জনতার বুকের রক্ত দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেটাকে নস্যাৎ করার জন্য একটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্য সমাজের গুরুত্বপূর্ণ লোক বিভ্রান্তমূলক কথা বলছে। এই সরকার যাদের দায়িত্ব দিয়েছে তাদের মধ্য অনেকে বলছে নতুন দল করতে হবে। আমাদের বিস্মিত লাগে নতুন দল গঠনের দায়িত্ব এদের কে দিয়েছে। তাহলে বলেন জনগণে কিভাবে বুঝবে এরা নিরপেক্ষ কাজ করছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে জনগণের নির্বাচিত সংসদ দিয়ে মানুষের সমাধান করতে হবে। যারা হাসিনা সরকারকে মদদ দিয়েছে, সেসব লোককে এখনো সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর থেকে অপসারণ করা হয়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, সমাজে যারা গুরুত্বপূর্ণ, তারা বিভ্রান্তকর কথা বলছে। সরকারে আছেন, এমন লোকই আছে, যারা বলেন নতুন দল করতে হবে। তাদের সব সংস্কার করতে হবে। তাহলে তো আর সংসদ লাগবে না, জনগণের মতামত লাগবে না।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, নিরপেক্ষতার সঙ্গে নতুন ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনের জয়ী হওয়া সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কী ধরনের সংস্কার করা দরকার। নতুন সংবিধান লাগবে নাকি সংবিধানের কিছু ধারা পরিবর্তন করলে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ প্রশাসন, অর্থনীতি ও বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নূন্যতম যেসব সংস্কার করা উচিত তা করতে হবে।

এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ লোক নাকি সরকারকে যতদিন ইচ্ছা ক্ষমতায় দেখতে চায়। বিভ্রান্ত সৃষ্টি হয় এমন জরিপ করা ঠিক না।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীর নামে হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় হওয়া মামলা প্রত্যাহার করা হোক। বিগত বছরগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং শহীদদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

অভ্যুত্থানের পরে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শহীদদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ফ্যাসিস্ট রেজিমদের হযে যারা কাজ করেছে তাদের সে সমস্ত জায়গা থেকে অপসারণ করা হযনি। অতিদ্রুত তাদের চিহ্নি করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে দীর্ঘ ত্যাগ তিতিক্ষার পরে ১৫ থেকে ১৭ বছর নির্যাতিত হয়েছি। বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্যাতিত হয়ে বিদেশে আছেন। আমাদের নেতাকর্মীর নামে ৬০ লাখ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সেইসাথে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে যারা আহত নিহত হয়েছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন।