মেক্সিকোর জঙ্গলে হদিশ মিললো ‘হারানো’ শহরের

Published: 30 October 2024

পোস্ট ডেস্ক :


মেক্সিকোর জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া শতাব্দী প্রাচীন একটি বিশাল মায়া শহর আবিষ্কৃত হয়েছে। মেক্সিকোর দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্য ক্যাম্পেচেতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা পিরামিড, খেলার মাঠ, জেলা সংযোগকারী সড়ক এবং অ্যাম্পিথিয়েটার খুঁজে পেয়েছেন।লিডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা এই গোপন শহরটি আবিষ্কার করেন। এর নাম রাখা হয়েছে ভ্যালেরিয়ানা। প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করছেন, প্রাচীন লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় মায়া শহর ক্যালাকমুলের পরেই এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। লুক অল্ড-থমাস নামে একজন প্রত্নতাত্ত্বিক ইন্টারনেটে ডেটা ব্রাউজ করার সময় অপ্রত্যাশিতভাবে শহরটির সন্ধান পান। লিডার প্রযুক্তির মাধ্যমে ম্যাপ তৈরি করে তিনি একটি বিশাল প্রাচীন শহরের ছবি পান। শহরটি ৭৫০ থেকে ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মানুষের আবাসস্থল ছিল বলে ধারণা করা হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ওই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষ প্রাচীন এই শহরে বসবাস করত। অল্ড-থমাস এবং তার সহযোগীরা একটি নিকটবর্তী হ্রদের নামানুসারে শহরটির নাম রেখেছেন ভ্যালেরিয়ানা। এই আবিষ্কারটি পশ্চিমা চিন্তাধারাকে বদলে দিয়েছে। এ ধারণা অনুযায়ী, ক্রান্তীয় অঞ্চলের সভ্যতাগুলো ‘মৃত্যুর দিকে’ পরিচালিত হয়েছে বলে বিবেচনা করা হত বলে জানিয়েছেন গবেষণার সহ-লেখক অধ্যাপক মার্সেলো ক্যানুতো। আবিষ্কৃত শহরটি প্রমাণ করে এটি খুব সমৃদ্ধ ছিল। শহরের পতন এবং এটি কেন পরিত্যক্ত হয়েছিল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। তবে তারা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি প্রধান কারণ হতে পারে। ভ্যালেরিয়ানার বৈশিষ্ট্যগুলো একটি রাজধানী শহরের মত। বিখ্যাত ক্যালাকমুল শহরের পরেই এর ভবনের ঘনত্ব দ্বিতীয় সর্বাধিক।প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলেন, এটি ‘খালি চোখে দেখা যায় না’ কারণ এটি এক্সিপুলের প্রধান সড়কের কাছ থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত। এক্সিপুলে বর্তমানে অধিকাংশ মায়া লোকজন বসবাস করেন। হারানো শহরটির কোনো পরিচিত ছবি নেই কারণ ‘কেউ কখনও সেখানে যায়নি,’ গবেষকরা বলেন। তবে, স্থানীয় লোকেরা হয়ত বুঝতে পেরেছিল, মাটির নিচে এর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। শহরটির আয়তন প্রায় ১৬.৬ বর্গ কিলোমিটার ছিল এবং এর দুটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। কেন্দ্রের ২ কিলোমিটার এর মধ্যে বড় বড় ভবন ছিল। ভবনগুলো ঘন বসতি এবং সড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। শহরটিতে দুটি প্লাজা (খোলা চত্বর) ছিল। সেখানে মায়া সভ্যতার লোকজন উপাসনা করত এবং সেগুলো তাদের লুকিয়ে থাকা সম্পদ যেমন জেড মাস্ক এবং মৃতদেহের সমাধিস্থলও ছিল। এছাড়াও সেখানে একটি আদালত ছিল। গবেষণায় একটি জলাধারের প্রমাণও পাওয়া গেছে। এটি নির্দেশ করে, এই অঞ্চলে একটি বৃহৎ জনসমাগম ছিল। অল্ড-থমাস এবং অধ্যাপক মার্সেলো ক্যানুতো জঙ্গলে তিনটি আলাদা সাইট জরিপ করেছেন এবং বিভিন্ন আকারের ৬ হাজার ৭৬৪টি ভবন আবিষ্কার করেছেন।লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যাপক এলিজাবেথ গ্রাহাম বলেন, মায়ারা নগরে বসবাস করত; বিচ্ছিন্ন গ্রামে নয় এটি তার প্রমাণ। গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের পর যখন মায়া সভ্যতা ধসে পড়তে শুরু করে তখন আংশিকভাবে অত্যধিক জনসংখ্যার কারণে এবং জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলায় অক্ষমতার কারণে শহরটির এমন পরিণতি হয়েছিল।
অল্ড-থমাস বলেন, ‘যখন খরা শুরু হয়, তখন মানুষ শহর ছেড়ে দূরে চলে যেতে শুরু করে ।’

লিডার প্রযুক্তি প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য গাছপালা আচ্ছাদিত এলাকা, যেমন ক্রান্তীয় অঞ্চলে জরিপ চালাতে অনেক সাহায্য করেছে। এটি হারানো সভ্যতাগুলির একটি নতুন জগৎ উন্মোচন করেছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক মার্সেলো ক্যানুতো।