মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট
চিকিৎসকদের উদাসীনতায় ১২ ঘন্টা যন্ত্রণায় ভুগে মারা যান ম্যারাডোনা

Published: 3 May 2021

পোস্ট ডেস্ক :


মৃত্যুর পূর্বে ১২ ঘন্টা অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন ফুটবলের কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। ওই সময় তার মেডিকেল টিম ছিল স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন, বেপরোয়া এবং উদাসীন। তার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তদন্ত শেষে রিপোর্টে এসব কথা বলেছে। ফুটবলের এই মহানায়ক ২০২০ সালের ২৫ শে নভেম্বর মারা যান। এরপর তার মৃত্যুকে ঘিরে নানা রহস্য দানা বাঁধতে থাকে। তা তদন্তে আর্জেন্টিনা সরকার গঠন করে মেডিকেল বোর্ড। ওই বোর্ড তদন্ত শেষে বলেছে, ফুটবলের এই মহানায়ক তার মানসিক অবস্থাকে পুরোপুরি মূল্যায়ন করেননি। যদি করতেন এবং তাকে যদি কোনো হাসপাতালে ভর্তি করা হতো, তাহলে তিনি হয়তো বেঁচে থাকতেন।
ম্যারাডোনার মৃত্যু নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তে এসব বিষয় ফুটে উঠেছে। মামলার প্রসিকিউটর এ কথা বলেছেন অনলাইন সিএনএনের সঙ্গে। এতে আরো বলা হয়েছে, কেন প্রয়াত এই ফুটবলারকে তার শেষ দিনগুলোতে বাসায় রেখে চিকিৎসা করা হয়েছে এবং তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা কী, সে বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেয়ার পর্যায়ে ছিলেন কিনা, এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তার হার্টের চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয়ে চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল কিনা তাও তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টে এর প্রতিটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। সাতজন ব্যক্তি বলেছেন, তাদেরকে জানানো হয়েছে, তারা তদন্তের অধীনে আছেন, যদিও তারা কোনো দায় থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টে বলা হয়েছে, যদিও এটা পাল্টা ধারণা যে, দিয়েগো ম্যারাডোনা হয়তো মারা যেতেন না- যদি তাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হতো। এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সে অনুযায়ী ম্যারাডোনাকে বাঁচিয়ে রাখার ভাল সুযোগ ছিল।

উল্লেখ্য, ম্যারাডোনার মেডিকেল টিমের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন স্নায়ু বিষয়ক সার্জন লিওপোলডো লুকুই এবং মনোবিজ্ঞানী অগাস্তিনো কোসাচোভ। চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে তাদের কড়া সমালোচনা করেছেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। তাদের কর্মকা-কে তদন্তে অনুপযুক্ত, স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন এবং বেপরোয়া বলে অভিহিত করেছে বোর্ড। তারা বলেছে, রোগীর সম্ভাব্য মৃত্যু সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে এবং সম্পূর্ণ জানতে পেরেছিলেন তার মেডিকেল টিমের সদস্যরা। কিন্তু ম্যারাডোনার মৃত্যু সম্পর্কে তারা একেবারেই উদাসীন ছিলেন এবং তাদের আচরণ ও চিকিৎসা পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আনেন নি। উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে ম্যারাডোনার সঙ্গে পেশাগত সম্পর্কের বিষয়টি প্রসিকিউটরদের জানিয়েছিলেন ড. লিওপোলডো লুকুই। তিনি বলেছিলেন, আমাদের অবহেলার কোনো প্রশ্নই আসতে পারে না। অন্যদিকে ডিসেম্বরে ড. অগাস্তিনা কোসাচোভের আইনজীবী সিএনএন’কে বলেছিলেন, তার মক্কেল রোগীর মেডিকেল চিকিৎসায় সর্বোত্তম সেবা দিয়েছেন।

মেডিকেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞরা ম্যারাডোনা মারা যাওয়ার পর তার ময়না তদন্তের রিপোর্ট যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, মারা যাওয়ার আগে ম্যারাডোনার ফুসফুস ফুলে গিয়েছিল এবং তা থেকে তিনি জটিল হৃদযন্ত্রের অসুস্থতায় ভোগেন। তবে তার শরীরে কোনো মাদক বা এলকোহলের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এর ফলে যেসব তথ্য সামনে এসেছে তাতে ম্যারডানো দীর্ঘ সময় যন্ত্রণা ভোগ করছিলেন। মারা যাওয়ার সময় তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৫ শে নভেম্বর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের কমপক্ষে ১২ ঘন্টা আগে মারা যাওয়ার ধারাবাহিকতা শুরু হয় ম্যারাডোনার। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ভুগেছেন। আমাদের তদন্ত রিপোর্ট বলে যে, আগের রাত ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ঠিকঠাকমতো নজরদারিতে রাখা হয়নি তাকে। উদ্বেগের বিষয় হলো, রোগীর মধ্যে যেসব লক্ষণ দেখা গিয়েছিল তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এতে ম্যারাডোনার প্রিয়জনদের কাছে পাঠানো তার ফিজিওথেরাপিস্ট নিকোলাস তাফারেলের একটি অডিও বার্তার কথাও উল্লেখ করেছেন। এতে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আগের সপ্তাহেই আমি তাদেরকে (অর্থাৎ ম্যারাডোনার মেডিকেল বোর্ড) বলেছিলাম তার বাড়তি যতœ নিতে হবে। কারণ, তার ফুসফুস ফুলে যেতে পারে।