ডায়াবেটিস আছে কিনা যেভাবে বুঝবেন, জেনে নিন করণীয়

Published: 11 June 2021

পোস্ট ডেস্ক :


ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগগুলো এখন মানুষের শরীরে নীরব ঘাতক হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।

বড় বিষয়, এদেশে বেশিরভাগ মানুষ জানেন-ই না তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ফলে সঠিক সময়ে তিনি চিকিৎসা নিতে পারছেন না। ডায়াবেটিস থেকে অন্যান্য রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন তিনি।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডায়াবেটিস এবং হরমোন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লায়েক আহমেদ খান বলেন, আমরা ডায়াবেটিস রোগীদের কয়েকটা ভাগে ভাগ করি। একটা ভাগ হলো, তাদের কোনো লক্ষণই থাকে না। এদেশে ৫০-৬০ ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ রোগী বুঝতে পারেন না। এমন রোগীও আসেন, যার ২৫-৩০ মিলি মোল ব্লাড সুগার হয়ে গেছে কিন্তু কোনো উপসর্গ নেই। হয়তো ব্লাড সুগার মাপতে গিয়ে কিংবা অন্য কোনো রোগের পরীক্ষা করতে গিয়ে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে।

আবার কিছু রোগীর ক্ষেত্রে শরীরে একটা ঘা বা ক্ষত হয়েছে, সেটা অনেকদিন ধরে শুকাচ্ছে না। কারও কারও ক্ষেত্রে শারীরিক দুর্বলতা বেড়ে যায়। অনেকের ওজন কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ফাঙ্গাল ইনফেকশনগুলো বেশি বেশি হয়। নারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় গর্ভপাত হয়ে যাতে পারে অথবা মুখে, জেনিটাল অরগানে ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। অনেক নারীর প্রেগন্যান্সি ঠিকমতো আসছে না বা ঝামেলা হচ্ছে।

অধ্যাপক ডা. লায়েক আহমেদ খান বলেন, আমরা ডায়াবেটিসকে নীরব ঘাতক বলছি। কারণ কোনো উপসর্গ ছাড়াই অনেকে রোগটি বহন করে এবং পরবর্তী জটিলতাগুলো চলে আসে। যেমন, কিডনির অসুখ, হার্টের অসুখ বা দেখা যায় নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে পা ঝিনঝিন ও ব্যথা নিয়ে আসলেন, পরীক্ষায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। তাই আমি মনে করি, ত্রিশোর্ধ্ব যেকোনো ব্যক্তিরই মাঝেমাঝে রক্তের শর্করার পরিমাণটা চেক করে নেওয়া উচিত। আর যদি পরিবারে কারও ডায়াবেটিস থাকে বা স্থূলকায় হয়, তাহলে তো তাকে অবশ্যই কিছুদিন পরপর পরীক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন তাদের প্রায় ৫০ শতাংশের মধ্যেই জটিলতাগুলো আগেই তৈরি হয়েছে। কারণ তারা কোনো উপসর্গ টের পাননি। সুতরাং ৩০ বছর বয়সের পরে প্রায়ই ব্লাড সুগার চেক করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে ওষুধ খেতে হবে।

অধ্যাপক ডা. লায়েক আহমেদ খান বলেন, ডায়াবেটিস আসলে প্রগ্রেসিভ বা দিনদিন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কারণ, যেখানে ইনসুলিন তৈরি হয়, সেই বিটা সেলের পরিমাণ দিনদিন কমতে থাকে। এটা জেনেটিক্যালি প্রিডিস্পোজড। কারও ক্ষেত্রে এই বিটা সেলের পরিমাণ খুব দ্রুত কমে; কারও ধীরে ধীরে। এটিকে আরও ধীরগতির করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। এজন্য প্রথমে খাদ্যাভাস ঠিক করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে। তারপরে প্রয়োজন হলে আমরা কিছু ওষুধ দিয়ে থাকি।

তিনি বলেন, রোগীদের বলছি, আপনারা নিয়মিত শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করবেন। শর্করার পরিমাণ অবশ্যই খাওয়ার পরে ৮-এর নিচে এবং খাওয়ার আগে ৬-এর নিচে থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এটা যেন বেড়ে না যায়। আবার খুব বেশি কমে গেলেও সমস্যা দেখা দেবে। গ্লুকোজ লেভেল ৪-এর নিচে নেমে গেলে সেটিকে আমরা হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলি। এক্ষেত্রে বুক ধড়ফড়, অনেক বেশি ঘাম এমনকি গ্লুকোজ খুব বেশি বেড়ে গেলে ঘনঘন প্রস্রাব হয়। এ রকম অবস্থা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।