বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম

Published: 20 July 2021

পোস্ট ডেস্ক :


এতদিন এখানে শুধু শান্ত জলস্রোত ছিল। তবে খুব শীঘ্রই এটি রঙিন হয়ে উঠবে, ভরে যাবে ৪০ হাজার ভক্তদের কোলাহলে। কাতারের রাস আবু আবউদ স্টেডিয়ামের কথা বলছি, ইতিহাসে প্রথম যে স্টেডিয়ামটি বিশ্বকাপের পর ভেঙে ফেলা হবে। দোহার বন্দরের উপরে ৯৭৪ শিপিং কনটেইনার দিয়ে তৈরি করা, রাস আবু আবউদ ২০২২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত সাতটি ম্যাচ আয়োজন করবে। এখানে ব্যবহৃত সমস্ত কনটেইনারগুলি পুনর্ব্যবহৃত ইস্পাত থেকে তৈরি করা এবং ৯৭৪ হল কাতারের ডায়ালিং কোডের প্রতীক। শুধু তাই নয়, দেশের অঙ্গীকার এবং পরিচয়ের প্রতিচ্ছবি। টুর্নামেন্টটি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, অপসারণযোগ্য আসন, এমনকি ছাদ সহ অনেকগুলি অংশ কাতারের অভ্যন্তরে বা বাইরে অন্যান্য খেলাধুলা বা অন্য ইভেন্টগুলিতে ব্যবহারের জন্য ভেঙে ফেলা হবে এবং পুনর্নির্মাণ করা হবে।

রাস আবু আবউদের প্রকল্প পরিচালক, মোহাম্মদ আল আতওয়ান সিএনএনকে বলেন, “৪০,০০০-সিটার ভেন্যু পুরোপুরি ভেঙে অন্য দেশে নিয়ে গিয়ে আবার নির্মান করা যাবে, অথবা আপনি এর থেকে অনায়াসেই দুই হাজার সিটের ভেন্যু তৈরি করতে পারবেন। এটাই এই স্টেডিয়ামের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট।

ভবিষ্যতের যেকোনো ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য এই স্টেডিয়াম পথ দেখাবে ” ফিফা একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে ২০২২ বিশ্বকাপে ৩.৬ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড উত্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, রাশিয়ায় আয়োজিত ২০১৮ সালের টুর্নামেন্টের সময়ে সেই পরিমান ছিল ১.৫ মিলিয়ন। কাতার দূষিত কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদনের মাত্রা হ্রাস করে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে বদ্ধপরিকর। আর তাই স্টেডিয়ামটি তৈরী করতে নির্মাতারা যে সামগ্রী ব্যবহার করেছেন তার থেকে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা কম। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে বিশ্বকাপের জন্য নির্মিত স্টেডিয়ামগুলিকে ঘিরে বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।

কাতার জানিয়েছে যে, তারা এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারীদের ভ্রমণ, আবাসন এবং খাবার ও পানীয়ের ব্যাবস্থার পাশাপাশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে তাদের উদ্যোগের কথা জানিয়ে সুপারিশ করতে চায়। বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলে, টুর্নামেন্ট পরবর্তী সময়ে ১০-১৫ বছরের মধ্যে দুটি মেগা সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষমাত্রা রয়েছে কাতারের। যার মাধ্যমে কম কার্বন উৎপন্ন হয় এমন ইভেন্টগুলিকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দিয়ে সেগুলিকে সামনের সারিতে আনতে চায় দেশটি। স্টেডিয়ামের অংশগুলির পুনরায় ব্যবহারযোগ্যতা সেই প্রচেষ্টার প্রতিফলন। আল আতওয়ান বলেছেন, “ দৃঢ়তা এবং লেগাসি সবসময়ই কাতারের পরিকল্পনা এবং বিশ্বকাপের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।”

স্টেডিয়ামটির নকশা প্রসঙ্গে আল আতওয়ান বলেছেন , স্টেডিয়ামটি বানাতে শিপিং কনটেইনার বেছে নেওয়ার কারণ এর চলমানতা বজায় রাখা। কনটেইনারগুলি বাতাসে বা সমুদ্রের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য নকশাকৃত করা হয়েছে, তবে যখন তাদের একসঙ্গে সংঘবদ্ধ করা হয় তখন তারা একটি দৃঢ় কাঠামোতে রূপান্তরিত হয়। ২০২২ এর বিশ্বকাপের জন্য নির্মিত অন্য ৭ স্টেডিয়ামের মধ্যে রাস আবু আবাউদ অনেক কম সময়ে তৈরী হয়েছে এবং এতে অনেক বেশি প্রকৃতির ছোঁয়া রাখা হয়েছে। যখন বাইরে থেকে কেউ এখানে আসবেন তখন দোহার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে তিনি হারিয়ে যাবেন। সূর্যাস্তের সময়ে আকাশে রঙের মেলা তাকে মুগ্ধ করবে, পাশেই সমুদ্রের নীল জলরাশি আকর্ষণ করবে। কাতারে প্রত্যেক স্টেডিয়াম নির্মাণের সময়ে একটি বিষয় মাথায় রাখা হয়েছে যাতে অতিথিদের গরম না লাগে, সেই মতোই রাখা হয়েছে কুলিং প্রসেস। রাস আবু আবাউদস্টেডিয়ামের প্রধান প্রকল্প পরিচালক আল আতওয়ান বলেছেন “২০২২ সালের পরে, এটি একটি সবুজ জায়গায় স্থানান্তরিত হতে পারে যা বাণিজ্যিক এবং আবাসিক প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে,” শুধু তাই নয় ফিফা বিশ্বকাপের মত মেগা ইভেন্ট আয়োজনের পর সেই জায়গার গুরুত্ব এমনিতেই অনেকটা বেড়ে যাবে বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন আল আতওয়ান।