একটি আধুনিক থানার জন্মকথা

Published: 7 October 2021

।। মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।।

সিলেট অঞ্চলের ইতিহাসের কথা আমাদের অনেকেরই জানা আছে। ১৭৭২ সালে সিলেট জেলার জন্ম হয়ে পরবর্তীকালে শত বছর ছিল বাংলার অধীনে। ১৮৭৪ সালে আসাম প্রদেশের অধীনে সিলেট জেলা চলে যায়। ব১⁄২ভ১ে⁄২র অল্প কয়েক বছর বাদে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা আসামের অধীনেই ছিল। ১৮৮২ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলার ছিল চারটি মহকুমা, যথা-শ্রীহট্ট সদর, করিমগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ। ১৮৮২ সালে শ্রীহট্ট সদর ভেঙে শ্রীহট্ট দক্ষিণ নামে আরেকটি মহকুমা ক্সতরি করা হয়। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগের সময়ে করিমগঞ্জ আসাম প্রদেশের অন্তভর্৩ু হয়। এ সময় করিমগঞ্জ সদর থানা দুইভাগ হয়ে অর্ধেক এলাকা জকিগঞ্জ থানা নামে শ্রীহট্ট সদর মহকুমার আওতাভু৩ হয়। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত করিমগঞ্জ মহকুমার অধীনে জলঢুপ ছিল একটি থানা। এ বছর থানাটি বিলুপ্ত হয়ে বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা থানা নামে দুটি থানা আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের সময় থানা দুটি করিমগঞ্জ মহকুমা থেকে আলাদা হয়ে বিয়ানীবাজার থানা শ্রীহট্ট সদরের অধীনে চলে আসে এবং বড়লেখা চলে যায় শ্রীহট্ট দক্ষিণ মহকুমার অধীনে। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর সিলেট জেলার অধীনে চারটি মহকুমা রয়ে যায়। শ্রীহট্ট সদর, শ্রীহট্ট দক্ষিণ, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ। সিলেট জেলা সৃষ্টির পর হতে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত এর নাম ছিল শ্রীহট্ট। ১৯৬০ সালে শ্রীহট্ট দক্ষিণ মহকুমার নাম পরিবর্তিত হয়ে মৌলভী ক্সসয়দ কুদরত উল্লাহর নামানুসারে এ মহকুমার নাম হয় মৌলভীবাজার। ১৯৮৪ সালে মৌলভীবাজার জেলায় উন্নীত হয়।
দীঘর্দিনধরেবর্তমানমৌলভীবাজারজেলারথানাছিলছয়টি।এরমধে ̈সবচেয়েপুরাতনথানাশ্রীম১⁄২ল,যা১৯১২সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মৌলভীবাজার সদর থানা, রাজনগর ও কুলাউড়া থানা তিনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯২২ সালে। বড়লেখা থানা সৃষ্টি হয় ১৯৪০ সালে। কমলগঞ্জ থানার সৃষ্টি ১৯৮৩ সালে।
জুড়ী এলাকার নামকরণ করা হয় ভারতের ত্রিপুরা রাজ ̈ থেকে বয়ে আসা ‘জুড়ী’ নদীর নামানুসারে। নদীটি বর্তমান জুড়ী থানা এলাকার মধ ̈ দিয়ে হাকালুকি হাওড় হয়ে কুশিয়ারা নদীর স১ে⁄২ মিলেছে। নদীর দুপাশেই জুড়ী থানা এলাকার বি ̄Í…তি। কুলাউড়া থানার অধীনে জুড়ী নামে একটি পুলিশ ক ̈াম্প প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৯ সালে ক ̈াম্পটি তদন্ত কেন্দেধ উন্নীত হয়।
যেহেতু কুলাউড়া থানার সতেরোটি ইউনিয়ন এবং বড়লেখা থানার বারোটি ইউনিয়ন ছিল। সুতরাং বড়ো দুটি থানার মাঝখানে অবি ̄’ত জুড়ী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে আলাদা একটি থানা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২৬ আগস্ট ২০০৪ সালে নিকার এর ৯০তম ক্সবঠকে বাংলাদেশের ৪৭১তম প্রাশাসনিক উপজেলা হিসেবে জুড়ী থানার আত্মপ্রকাশ ঘটে। থানা সৃষ্টির সময়ে এর ইউনিয়ন ধরা হয় আটটি। এর মধে ̈ বড়লেখা থানার চারটি (যথা-পূর্বজুড়ী, পশ্চিমজুড়ী, দক্ষিণভাগ ও সুজানগর ইউনিয়ন) এবং কুলাউড়া থানার চারটি (যথা-জায়ফরনগর, গোয়ালবাড়ী, সাগরনাল ও ফুলতলা ইউনিয়ন)। পরবর্তীকালে মহামান ̈ হাইকোর্টে রিটের আলোকে বড়লেখা থানার দক্ষিণভাগ ও সুজানগর ইউনিয়ন বাদ পড়ে বাকি ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে বর্তমানে থানাটির কার্যμম চলছে। ইউনিয়ন ̧লো হলো-পূর্বজুড়ী, পশ্চিমজুড়ী, জায়ফরনগর, গোয়ালবাড়ী, সাগরনাল ও ফুলতলা। প্রতিটি ইউনিয়নকে একটি পুলিশ ইউনিট হিসেবে বিবেচনা করে বিট হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে বিট পুলিশিং কার্যμম চলমান। উল্লেখ ̈ যে, পুলিশিং-কে প্রাšিকÍ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়াই বিট পুলিশিংয়ের মূল উদ্দেশ ̈।
জুড়ী থানার উত্তরে বড়লেখা থানা, দক্ষিণে কুলাউড়া থানা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজে ̈র সীমানা ও পশ্চিমে হাকালুকি হাওড়।থানাএলাকারপ্রাক…তিকসৌন্দর্যমনোমুগ্ধকর।এখানেরয়েছেএগারোটিচাবাগান,কমলাবাগান,খাসিয়াপল্লি,প্র ̄াÍবিত ব১⁄২বন্ধু সাফারি পার্ক এলাকা, হাকালুকি হাওড়ের একাংশ। পূর্বে কুলাউড়া হতে শাহবাজপুর হয়ে যে টেনধ লাইন ভারতের করিমগঞ্জ পর্যন্ত ছিল, তা আবার চালু হতে যাচ্ছে। জুড়ীতে একটি রেলস্টেশন হবে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার এর এলএ কেস নং-১/২০১২-২০১৩ মূলে জুড়ী উপজেলার বাছিরপুর মৌজায়, কুলাউড়া-বড়লেখা সড়কের স১ে⁄২ ১.০০ একর জমি জুড়ী থানার নামে অধিগ্রহণ করা হয়।
পুলিশ বিভাগের একশত একটি জরাজীর্ণ থানাভবন টাইপ প্ল ̈ানে নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট চারতলা আধুনিক জুড়ী থানাভবন নির্মাণের লক্ষে ̈ ২০১৫-২০১৬ অর্থ সনে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৭,৩১,৪৪,৩৫০ (সাত কোটি একত্রিশ লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার তিনশত পঞ্চাশ) টাকা ব ̈য়ে থানাভবনটি নির্মিত হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে রয়েছে অফিসকক্ষ ও আবাসনসহ অন ̈ান ̈ সুবিধাদি। বন ̈া ও করোনার কারণে ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হয়। মাননীয় ̄^রাষ্টধমšী¿ জনাব আসাদু৩⁄৪ামান খান এমপি, মাননীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী জনাব মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি মহোদয়ের উপি ̄’তিতে আজ ০৯ অক্টোবর ২০২১ খিধ. শনিবার জুড়ী থানাভবনের উদ্বোধন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে মাননীয় ̄^রাষ্টধমন্ত্রী জুড়ী থানা ভবননির্মাণেরভিত্তিপ্র ̄রÍ ̄’াপনকরেছিলেন।

প্রতি তলায় ৬৫০০ বর্গফুট আয়তনের চারতলা ভবনের সামনে রয়েছে সবুজ মাঠ ও সুদৃশ ̈ ফুলের বাগান। থানা আঙিনায় প্রবেশের মুখেই বামপাশে রয়েছে একটি নয়নাভিরাম ছোট পুকুর। থানার সেবা প্রত ̈াশীগণ থানা আ১ি⁄২না ও ভবনে প্রবেশের পর এর আয়োজন দেখে মুগ্ধ হবেন। বর্তমানে যারা জুড়ী থানা পুলিশে কাজ করছেন এবং ভবিষ ̈তেও যারা কাজ করবেন তাদের কাছে প্রত ̈াশা, সুন্দর ভবনে অব ̄’ান করে জনগণকে উন্নত ব ̈বহারের মাধ ̈মে দধুত ও কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত করবেন।
জুড়ী থানা ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে ‘একটি আধুনিক থানার জন্মকথা’ শিরোনামে একটি ̄§ারকগ্রন্থ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে সিলেট রেঞ্জপুলিশওমৌলভীবাজারজেলাপুলিশেরতত্তা¡বধানে।গ্রন্থটিতেমৌলভীবাজারতথাজুড়ীথানাএলাকারইতিহাস,সং ̄‹…তিও প্রাক…তিক ক্সবচিত্রে ̈র বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। সচিত্র ও তথ ̈ সংবলিত আকারে সফলতার স১ে⁄২ থানা পুলিশের কার্যμম পরিচালনার লক্ষে ̈ বেশ কিছু করণীয় বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। এটি করতে গিয়ে বা ̄Íব জ্ঞান ও আইনের দিকটি মাথায় রাখা হয়েছে। থানায় কর্মরত এবং থানায় নবাগত পুলিশ সদস ̈গণ বইটি পাঠ করে জুড়ী থানা এলাকা ও থানা পুলিশিং বিষয়ে সম ̈ক ধারণা অর্জন করতে পারবেন। পুলিশ সদস ̈গণের পেশাদারিত্বের স১ে⁄২ দায়িত্ব পালন করতে বইটি সহায়ক হবে। সাধারণ পাঠকও বইটি পড়ে জুড়ী এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ ̈সহ পুলিশি কার্যμম সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।
ব১⁄২বন্ধুর ̄^ে প্নর সোনার বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও উন্নত করার লক্ষে ̈ পুলিশকেউন্নতসুযোগ-সুবিধাদেওয়ারপক্ষেকাজকরেযাচ্ছেন।মাননীয় ̄^রাষ্টমধন্ত্রীওআইজিপিমহোদয়এধারাকেবেগবান করার জন ̈ দিনরাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস ̈গণ নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সরকারের দিঙ্নির্দেশনা বা ̄Íবায়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন।
লেখক : ডিআইজি, সিলেট রেঞ্জ