বাংলাদেশ ২০৩৬ সালে বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে

Published: 27 December 2021

পোস্ট ডেস্ক :


অর্থনৈতিক বিকাশের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০৩৬ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে। যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি শনিবার রাতে প্রকাশিত হয়।

এতে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, এরই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সিইবিআর প্রতিবছর এই রিপোর্ট প্রকাশ করে। এটি সংস্থাটির ১৩তম প্রতিবেদন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর মাত্র ৮ বছর পরেই চীন হবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০৩১ সালে ভারত হবে তৃতীয়। আর এ সময় দ্বিতীয় হবে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি চতুর্থ ও জাপান পঞ্চম। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ব অর্থনীতি ডলারে একশ ট্রিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে।

সিইবিআর বলছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ৪১তম, ২০২৬ সালে ৩৪তম ও ২০৩১ সালে ২৯তম। ২০৩৬ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বহু ধাপ ওপরে উঠে হবে ২৪তম অর্থনৈতিক শক্তি। অর্থাৎ আগামী ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৮ ধাপ এগিয়ে যাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের মধ্যেও কিছুটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে, সামনের বছরগুলোয় বাংলাদেশে ধারাবাহিক এবং জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে বলে জানিয়েছে সিইবিআর।

সংস্থাটি বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগের বছরগুলোয় বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল বেশ ভালো। বিশ্বের অন্যান্য দেশে কোভিড-১৯ যেভাবে ছড়িয়েছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ অনেক সীমিত রাখা গেছে। চলতি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মারা গেছে প্রতি ১ লাখে ১৭ জন। মহামারির কারণে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব কিছুটা কম থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু অন্য অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে, যা অন্তর্জাতিক মানদণ্ডে একটি বড় অর্জন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আর ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি অব্যাহতভাবে বেড়েছে। পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ছে গড়ে ১ শতাংশ হারে। ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মূল চালিকাশক্তি ছিল প্রবাসী আয় ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি।

সিইবিআর বলছে, এক দশক ধরে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। এর পেছনে কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট, পোশাক খাতের মাধ্যমে ব্যাপক রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, স্থিতিশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি অর্থনীতি, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন।

সিইবিআর বলছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৩৩ ডলার। এই হিসাবটা পিপিপি বা পারচেজিং পাওয়ার (ক্রয়ক্ষমতা) প্যারিটিকে হিসাবে নিয়ে করা। বাংলাদেশকে এখন একটি নিুমধ্যম আয়ের দেশ বলে গণ্য করা হয়। ২০৩৬ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রথম ২৫টি দেশের তালিকায় যুক্ত হবে তিনটি নতুন দেশ: ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভিয়েতনামের অবস্থান হবে ২০, বাংলাদেশের ২৪ ও ফিলিপাইনের ২৫। এ সময় যেসব অর্থনীতিকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে তার মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, ইসরাইল, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, সুইডেন ও তাইওয়ান। বর্তমান বিশ্ব সূচকে এই দেশগুলো বাংলাদেশের ওপরে, কারণ তাদের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে বড়।