‘জন্মদিন পালনের কথা বলে হোটেলে এনে নারী চিকিৎসককে খুন’

Published: 12 August 2022

বিশেষ সংবাদদাতা :


রাজধানীর আবাসিক হোটেল থেকে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

জান্নাতুলকে হত্যায় অভিযুক্ত রেজাউল করিম তার স্বামী। বিয়ের পর পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন রেজাউল। তার পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় খুন হন জান্নাতুল। ঘটা করে জন্মদিন পালনের কথা বলে হোটেলে ডেকে এনে এই চিকিৎসককে খুন করেন রেজাউল।

জান্নাতুল নাঈম হত্যার ঘটনায় রেজাউলকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যা ব।

র‌্যাব জানায়, পরিবারকে না জানিয়ে দুই বছর আগে জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিককে বিয়ে করেছিলেন রেজাউল করিম রেজা। একাধিক নারীর সঙ্গে রেজাউলের সম্পর্ক রাখার বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এর জেরেই পরিকল্পিতভাবে জান্নাতুলকে খুন করেন রেজাউল। জন্মদিন পালনের কথা বলে আবাসিক হোটেলে এনে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় তাকে।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে রেজাউলকে গ্রেফতার করে র্যা ব। হত্যাকাণ্ডের সময় রেজাউলের পরিহিত রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং নিহত নারীর ব্যবহৃত মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।

এর আগে গত বুধবার রাতে রাজধানীর পান্থপথের ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট আবাসিক হোটেল থেকে জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের চিহ্ন দেখা গেছে।

জান্নাতুল রাজধানীর মগবাজার কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনি বিষয়ের একটি কোর্সে পড়ছিলেন। এ ঘটনায় বুধবার একটি হত্যা মামলা করেন নিহত নারীর বাবা চিকিৎসক শফিকুল আলম।

রেজাউলকে গ্রেফতারের পর শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যা বের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র্যা বের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীকের সঙ্গে রেজাউলের পরিচয় হয়। এর সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিবারের কাউকে না জানিয়ে ২০২০ সালের অক্টোবরে তারা বিয়ে করেন। এ কারণে তাঁরা স্বামী–স্ত্রীর পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতেন তারা।

রেজাউলের সঙ্গে একাধিক নারীর সম্পর্ক ছিল উল্লেখ করে র্যা বের এই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি জান্নাতুল জেনে যান। এই নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন সময় বাগ্বিতণ্ডাও হয়। জান্নাতুন বিভিন্ন সময়ে কাউন্সেলিং বা আলাপচারিতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এদিকে রেজাউল জান্নাতুলকে তার প্রেমের পথে বাধা মনে করছিলেন। সুবিধাজনক সময়ে নির্জন স্থানে নিয়ে জান্নাতুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। এ কারণে একটি ছুরি তিনি কয়েক দিন ধরে নিজের কাছে রাখছিলেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, পরিকল্পনামাফিক এবারের জন্মদিন খুবই ঘটা করে একটি রেস্টুরেন্টে উদ্যাপনের পরিকল্পনার কথা জানান রেজাউল। বুধবার জন্মদিন উদ্যাপনের কথা বলে পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্টে’ নামে একটি হোটেলে জান্নাতুলকে নিয়ে যান রেজাউল। রেজাউলের সঙ্গে বিভিন্ন নারীর সম্পর্ক থাকার বিষয়টি নিয়ে আবারও তাদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি, বাগ্বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় রেজাউল তার ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে জান্নাতুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে। পরে জান্নাতুলের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি।

র্যা ব জানায়, স্ত্রীকে হত্যার পর রেজাউল গোসল করে রক্তমাখা জামা ও জান্নাতুলের মুঠোফোন ব্যাগে নিয়ে ওই কক্ষ বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে পালিয়ে যান। হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে মালিবাগের বাসায় যান। বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে হাতের ক্ষত স্থান সেলাই করে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে আত্মগোপন করেন। এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে একটি মেসে উঠেছিলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রেজাউল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। এমবিএ চলাকালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। ২০২২ সালের জুনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করেন।