যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৭ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার।। ব্যাপক প্রতিক্রিয়া

Published: 27 September 2022

বিশেষ সংবাদদাতা :

যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৭ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারে লন্ডন ও সিলেট-সুনামগঞ্জে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ‘হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’র বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ নিতে লন্ডন থেকে ঢাকায় এসেছিলেন কোম্পানিটির এই ৭ পরিচালক। কিন্তু গ্রাহকের পলিসির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানিটির মতিঝিলের প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে একই মামলার আসামি হলেও গ্রেপ্তার করা হয়নি কোম্পানিটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকসহ অন্য কোনো পদস্থ কর্মকর্তাকে। অভিযোগ উঠেছে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই ৭ ব্যবসায়ী দেশে ফেরায় ক্ষুব্ধ হয়ে গোপনে পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা।

গ্রেপ্তারকৃত সাত ব্যবসায়ী হলেন- সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার বাসিন্দা জামাল মিয়া ও তার ভাই কামাল মিয়া, বিশ্বনাথের আবদুল আহাদ ও তার ভাই আবদুল হাই, ছাতকের জামাল উদ্দিন ও শাহজালাল উপশহরের আবদুর রাজ্জাক। তাদের মধ্যে জামাল মিয়া কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও বাকি সবাই পরিচালক। অপর আরেক পরিচালক আবদুর রবের পরিচয় জানা যায়নি।

জানা গেছে, গত ২১শে সেপ্টেম্বর হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছিল। লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ওই সভায় অংশ নেন ৭ ব্যবসায়ী।

এ সময় মতিঝিল থানা পুলিশ ওই কার্যালয়ে হানা দেয়। তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত খান জানান, গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি ছিল। কিন্তু তারা দেশের বাইরে থাকায় গ্রেপ্তার করা যায়নি। দেশের ফেরার তথ্য পেয়ে তাদের গ্রেপ্তারের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরোয়ানার ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন আড়পাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের বীমা গ্রাহকদের পলিসির টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। আদালত মামলাগুলো আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানার কপি ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে পরোয়ানা তামিলের জন্য মতিঝিল থানায় পাঠানো হয়। আদালতের পরোয়ানা পেয়ে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

এদিকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও ছয় পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত করা হয়নি চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকসহ অন্য কোনো পদস্থ কর্মকর্তাদের। এ নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত বীমা কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় থেকে গত বুধবার (২১শে সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দেশে বিদেশে তাদের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জামাল মকদ্দুস নিজ এলাকা ছাতক থানার নিজ গ্রামে জামাল উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের অদূরে ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কেরও অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক তিনি।
ঘটনাটিকে অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে জানান হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার মণ্ডল।

এদিকে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ এবং বীমা দাবির টাকা মিটিয়ে না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেক দিনের। এছাড়া ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়ম রয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে বিভিন্ন রকমের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রবাসী পরিচালকরা দেশে থাকা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বারবার তাগাদা দিলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্যই তারা দেশে ফেরায় ক্ষুব্ধ হয়ে গোপনে পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি এ মামলায় দেশে থাকা কোনো পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা কমিটির কাউকেই আসামিও করা হয়নি। আবার পাল্টা অভিযোগ রয়েছে প্রবাসী পরিচালকরা একজোট হয়ে দেশে থাকাদের কোণঠাসা করে কোম্পানি পরিচালনায় একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কর্মীদের বাধ্য করত। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার হোল্ডারসহ কর্মীদের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ও নতুন দিন সম্পাদক মহিব চৌধুরী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশীরা মাতৃভূমির টানেই এখানে বিনিয়োগ করেন। তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ রাখার দায়িত্বও সরকারের। এসকল প্রবাসীর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। কারণ সাধারণত কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হলে এর চেয়ারম্যান, এমডি-জিএমের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকে। কিন্তু এ ঘটনায় এরকম কিছুই নেই। এতে ঘটনার ব্যাপারে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। রহস্য উদঘাটন করে মূল ঘটনা বের করতে তিনি দাবি জানিয়েছেন।

ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে বিভিন্ন সময়ে প্রবাসীদেরকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও দেশে বিনিয়োগ করে প্রবাসীরা অনেক সময় হয়রানির শিকার হন। হোমল্যান্ড লাইফের এই ঘটনাটি এর জ্বলন্ত প্রমাণ। তিনি বলেন, আজ তারা টাকা আত্মসাত ও প্রতারণার মামলায় জেলহাজতে। কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্তদের আসামী না করে ৭ জন প্রবাসী পরিচালককে গ্রেফতার নিয়ে প্রবাসীদেরকে সোচ্চার হবার পরামর্শ দেন।