ইলিশ রপ্তানি করে এ বছর আয় ১৪১ কোটি টাকা
পোস্ট ডেস্ক :
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, চলতি বছর ১ হাজার ৩৫২ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এতে আয় হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার (১৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়ন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ ইলিশ। এটি আমাদের জাতীয় মাছ। এ মাছ দেশের মানুষের খাদ্য ও নিরাপদ আমিষের জোগানের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রপ্তানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশে মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ দশমিক ২২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে, যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপিতে এর অবদান শতকরা ১ ভাগ। বাংলাদেশের ইলিশ ইতোমধ্যে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সর্বশেষ ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ শীর্ষে। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এদেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সমন্বিতভাবে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান সরকারের নেওয়া ব্যবস্থাপনায় তা ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১২ বছরে দেশে ইলিশ আহরণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৯০ শতাংশ।
ইলিশ রপ্তানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমার অভিমত দেশের সব মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করুক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বেশ কিছু দেশে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি হয় ভারতে, সেখান থেকে বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে। হাইকোর্ট যদি কোনো আদেশ দেন তাহলে অবশ্যই সেটি প্রতিপালন করা হবে। বাণিজ্যিকভাবে ইলিশের রপ্তানি এভাবে হয়নি, এবার যে পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে। এবার অধিকাংশ রপ্তানিটা ভারতে হয়েছে।
তিনি বলেন, অন্যান্য কয়েকটি দেশেও ইলিশ গেছে, সেগুলো উপহার কিংবা ব্যক্তিগতভাবে গেছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ভারতে। আগে ইলিশ পাওয়াই যেত না এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এখন ইলিশ অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে, আমার মনে হয় ৬৪টি জেলার সর্বত্র ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ইলিশ পৌঁছানোর আমাদের একটি লক্ষ্য আছে। আমাদের কর্মসূচি সফল করতে পারলে ইলিশ সবার কাছে পৌঁছাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ইলিশ রপ্তানি বাড়ানো আর ঠিক হবে না।
রেজাউল করিম বলেন, দেশে প্রায় ৬ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ ইলিশ পরিবহণ, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি প্রভৃতি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
মন্ত্রী বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় নিয়ে ধরে মৎস্য সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময় ২২ দিন করা হয়েছে। প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ সমৃদ্ধ এলাকার জেলেদের জন্য ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি বছর জাটকা ধরা নিষিদ্ধকালে দেশের ২০ জেলার ৯৭টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে ফেব্রুয়ারি-মে পর্যন্ত ৪ মাসের জন্য ৫৯ হাজার ১৪১ মেট্রিক টন ভিজিএফ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ২০২২ সালে সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫দিন মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালে সমুদ্র উপকূলীয় ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২টি জেলে পরিবারকে ২৬ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।