ইফতারের জরুরি কয়েকটি মাসআলা
মুফতি সাদেকুর রহমান
দেরি না করে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা মুস্তাহাব। হজরত সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুসলমানরা কল্যাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে যতক্ষণ তারা সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-১৯৫৭)
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা ফরমান: আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বান্দা ওই ব্যক্তি, যে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করে। (সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-৭০০)
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন; ইসলাম ধর্ম বিজয়ী হিসেবে থাকবে যতক্ষণ মুসলমানরা সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে। কেননা ইহুদি এবং খৃষ্টানরা বিলম্বে ইফতার করে। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদিস নং-২৩৫৩)
এ সব হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, যখন সূর্যাস্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হবে তখন আর বিলম্ব না করে সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করে নেওয়া মুস্তাহাব।
মাগরিবের নামাজ পড়ার আগেই ইফতার করা
মাগরিবের নামায পড়ার আগেই ইফতার করে নিতে হবে। যেন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করার সওয়াব পাওয়া যায়।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর দ্বারা। তাও না পেলে এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। (জামে তিরমিযী, হাদিস ৬৯২)
কখন ইফতার করা মাকরূহ?
সূর্যাস্ত হয়ে গেছে এটা নিশ্চিত জানার পরও বিলম্ব করে ইফতার করা মাকরূহ। নিশ্চিত সূর্যাস্ত হয়ে গেছে কিন্তু এখনো দিনের আলো অবশিষ্ট রয়ে গেছে, অন্ধকার হয়নি, অথবা এখনো শরীরের পশম দেখা যাচ্ছে, অথবা মসজিদ থেকে আজান হচ্ছে না ইত্যাদি কারণে বিলম্ব করে ইফতার করা মাকরূহ। (ফাতাওয়া আলমগীরী-১/২০০)
কী দ্বারা ইফতার করবেন?
খেজুর দ্বারা ইফতার করা উত্তম। এর ব্যবস্থা না থাকলে পানি দ্বারা।
হজরত সালমান ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ ইফতার করতে চাইলে যেন খেজুর দ্বারা করে। কেননা তা বরকতপূর্ণ। আর তা সম্ভব না হলে পানি দ্বারা করবে। কেননা তা পবিত্রকারী। (সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-৫৫৮ ; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৬৯৯)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাগরিবের নামাজ আদায়ের পূর্বে কিছু পাকা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর তা না থাকলে কয়েকটি শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন আর তাও না পাওয়া গেলে কয়েক ঢোঁক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। (সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং-৬৯৬, তাবয়ীনুল হাকায়েক- ১/৩৪৩)
ইফতারের পূর্বে করণীয় কী?
ইফতারের সময় হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে ইফতার প্রস্তুত করে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করা, বেশি বেশি দোয়া-দরুদ পড়া, তাওবা-ইস্তিগফার করা। ঘরে মা বোনরাও এর প্রতি যত্নশীল হবেন। এক্ষেত্রে পুরুষরাও তাদেরকে সহায়তা করবেন।
ইফতারের সময় দোয়া
ইফতারের সময় নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করবে
اَللهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِيْ
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার সেই রহমতের ওসীলায় প্রার্থনা করছি, যা সকল বস্তুতে পরিব্যাপ্ত, তুমি আমাকে মাফ করে দাও। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৭৫৩)
ইফতার গ্রহণের সময় কী দোয়া পড়তে হবে?
হজরত মুআয বিন যুহরা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন- اللَّهمَّ لَكَ صُمتُ وعلَى رزقِكَ أفطَرتُ (হে আল্লাহ তোমার জন্যই আমি রোজা রেখেছি এবং তোমার রিযিক দ্বারাই ইফতার করেছি। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদিস নং-২৩৫৮)
ইফতার গ্রহণের পরের দোয়া
হজরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেন-
ذَهَبَ الظَّمأُ، وابْتَلَّتِ العُرُوقُ، وَثَبَتَ الأجْرُ إِنْ شاءَ اللَّهُ تَعالى
(তৃষ্ণা দূর হয়েছে, শিরা-উপশিরা সিক্ত হয়েছে। যদি আল্লাহ চান তবে রোজার সওয়াব লিপিবদ্ধ হয়েছে। সুনানে আবূ দাউদ, হাদিস নং-২৩৫৭)
ইফতারি ও রাতের খাবার এক সঙ্গে খেয়ে একটু বিলম্বে মাগরিবের নামাজ আদায় করা যাবে কি?
উত্তম হলো, সংক্ষিপ্ত সময়ে ইফতার করে নামাজ আদায় করা। তারপর ইচ্ছা হলে খাবার খাবে। তা সত্ত্বেও যদি বিশেষ কোন কারণে ইফতারি ও রাতের খাবার একসঙ্গে খাওয়ার পর নামাজ আদায় করে, তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। তবে এই পরিমান সময় বাকি থাকতেই পানাহার শেষ করতে হবে, যাতে মাকরূহ ওয়াক্তের পূর্বেই নামাজ আদায় করা যায়। (ফাতাওয়া হক্কানিয়া- ৪/১৫৪)
লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।