অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র, ঐকমত্য পোষণ বাংলাদেশের

Published: 13 April 2023

বিশেষ সংবাদদাতা :


আগামী জাতীয় নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জন ব্লিনকেনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের এক বৈঠকে এ গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। সেখানে এর সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক সেহেলী সাবরীন।

ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ সংশোধনের ব্যাপারে আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠাচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় সেগুলো দেখছে। আইন প্রণেতারা মনে করলে সেটি সংশোধন করবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশটির সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি, দ্রুত সিদ্ধান্ত পাব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর বিভিন্ন দেশের সফরের উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, আগামী ২৫ থেকে ২৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও’র আমন্ত্রণে জাপান সফর করবেন। এ সফরকালে ৮-১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।

অ্যান্টনি জন ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠকে জিএসপি ফেরত দেওয়ার ওয়াদা করেছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেহেলী সাবরীন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জিএসপি নিয়ে আলোচনা চলমান আছে। যে কারণে জিএসপি স্থগিত হয়েছিল বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ, শ্রমিকদের অবস্থা। আর সেগুলোর ব্যাপারে ২০২৫ সালের মধ্যে যে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ এরই মধ্যে আইনমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ে তা উপস্থাপন করেছেন।

বাংলাদেশের একটি পত্রিকা স্বাধীনতা দিবসে একটি শিশুকে ব্যবহার করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, আন্তর্জাতিক মহলে এর জন্য জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো জবাবদিহিতার মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেবে কিনা- অপর প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, বিষয়টি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় দেখছে। এখন তদন্ত হচ্ছে। ফলে এমন কোনো মন্তব্য করা ঠিক না, যা তদন্ত কাজে বাধা সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশের ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা সুপারিশগুলো নিয়ে কোনো কাজ করছে কিনা- সরকার জানতে চাইলে জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, আমাদের দেশে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আইন প্রণয়ন হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও সেভাবে হয়েছে। এ আইনটি প্রসঙ্গে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে আমরা সুপারিশ পাচ্ছি। আইন প্রণেতারা যদি মনে করেন সংশোধনের প্রয়োজন তাহলে সেটি করবেন। সুপারিশগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। মন্ত্রণালয় এসব সুপারিশ নিচ্ছে।

র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সর্বশেষ অবস্থা এবং এটি প্রত্যাহার করতে কোনো ধরনের ‘ল’ ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিনা- প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলমান আছে। এ ছাড়া ‘ল’ ফার্ম নিয়োগ নিয়েও কাজ চলছে। আমরা প্রত্যাশা করছি স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) প্রদানকারী রাষ্ট্র এটি তুলে নেবে।

খবর প্রকাশ হয়েছে কলকাতায় মার্কিন দূতাবাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন জন বৈঠক করেছেন- এ বিষয়ে ভারতের কাছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো তথ্য চেয়েছে কিনা? জবাবে বলা হয়, অন্য রাষ্ট্রের দূতাবাসে কী হচ্ছে সেটি নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই। এর বাইরে আমাদের কাছে কোনো তথ্যও নেই।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে কী বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সব সময় বলেছি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিশন গঠন হয়েছে। বাংলাদেশ একটি বায়োমেট্রিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং স্বচ্ছ ব্যালেট বক্স ব্যবস্থা করেছে। মূলত স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য। ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালনের জন্য অনেক দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন যোগাযোগ রাখছে।

ব্রিফিংয়ে সেহেলী সাবরীন বলেন, একে আবদুল মোমেন সম্প্রতি জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, কূটনীতি, আঞ্চলিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। এর আগে রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) আয়োজিত এক সভায় দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট, নির্বাচনি প্রক্রিয়া, অংশ গ্রহণমূলক সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন। সেখানে আইআরআই কর্মকর্তারা সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান।

এ ছাড়া গত ১১ এপ্রিল একে আবদুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদার ও বহুমুখীকরণ, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা এবং নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে শ্রম খাত সংস্কারের চলমান এবং সম্পন্ন কাজ সম্পর্কে ব্লিনকেনকে অবহিত করেন। এ সময় ব্লিনকেন শ্রম পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দুই দেশের মধ্যে চলমান যৌথ কর্মকাণ্ডের অগ্রগতির সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ড. মোমেন রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। এ সময় ব্লিনকেন প্রচেষ্টা আব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে প্রেরিত উষ্ণ বার্তার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেরিত একটি চিঠি হস্তান্তর করেন।

এ ছাড়া গত ১০ এপ্রিল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের সদস্য মিস ভ্যালেরি হায়ারের একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মিস ভ্যালেরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে টেকসই পরিবেশ এবং সামাজিক জীবন মানোন্নয়ন সংক্রান্ত ফেয়ার বর্ডার ট্যাক্স বিষয়ক প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।