নরসিংদীতে ৫ দিন ধরে মায়ের লাশের সঙ্গে বসবাস!

Published: 12 June 2023

বিশেষ সংবাদদাতা :


নরসিংদীর মনোহরদীতে মৃত্যুর ৫ দিন পর জীবন ফিরে পাবে সেই বিশ্বাসে মায়ের লাশের সঙ্গে বসবাস করছেন পরিবারের লোকজন। গত বুধবার (৭ জুন) মারা যান শামীমা বেগম (৬০) নামের এক বৃদ্ধা মহিলা। তবে পীরের নির্দেশে তার লাশ দাফন না করে মৃতদেহকে ঘরে রেখেই বসবাস করছেন পরিবারের সদস্যরা। সাথে ছিলেন শিশুরাও। পাঁচদিন পর ওই ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে ঘর থেকে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর মনোহরদীতে। শনিবার মনোহরদী বাজার সংলগ্ন এলাকার একটি বাড়ি থেকে শামীমা বেগমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এ সময় স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোক্তার হোসেন তালুকদার (৭০) এবং তার চার মেয়েকে পুলিশ আটক করেছেন।

আটককৃত চার মেয়ে হলেন- রিমি আক্তার (৩৫), সুমি আক্তার (৩০), জনি (২৪) এবং নিশাত (১৮)। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে রিমি আক্তার স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, ওই পরিবারের সদস্যরা এক পীরের মুরিদ ছিলেন। পীরের নির্দেশে তারা সবাই ২০২০ সাল থেকে একটি আবদ্ধ ঘরে অবরুদ্ধভাবে জীবযাপন করতেন। পীরের দেয়া নির্দেশনা পালন করতে যেয়ে পরিবারটি সামাজিকভাবে এলাকার কারো সাথে কথা বলতেন না।

২-৩ বছর যাবৎ ৬-৭ জন সদস্যের এ পরিবারটি তাদের ভণ্ডপীরের আদেশ পালন করতেন এবং অমরত্ব জীবন লাভ করতে পরিবারের লোকজন এসব কুসংস্কার রীতিনীতি পালন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে । পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুক্তার হোসেন মাস্টার বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে পীরের দেয়া আমলে মগ্ন থাকতেন। কথীত পীরের দেয়া আমল মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে মায়ের অমরত্ব ও পুনর্জীবিত হওয়ার আশা নিয়ে মৃত মায়ের লাশ শয়ন কক্ষের খাটের নিচে রেখে দেয়। মৃত্যুর ৫ দিন পর লাশের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজন টের পেয়ে মনোহরদী থানা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে রহস্যময় বাড়ির দরজার তালা ভেঙে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে খাটের নিচে থেকে অর্ধগলিত পচা লাশ উদ্ধার করেন।
নিহতের স্বামী মোক্তার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘আমার স্ত্রী ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিল। গত বুধবার বিকেলে অসুস্থতা বেড়ে গেলে সে মারা যায়।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও চার মেয়ে এক পীরের মুরিদ ছিল।
মৃত্যুর আগে আমার স্ত্রী শামীমা আমাকে বলছিল- তিনি মারা গেলে তাকে যেন কবরস্থ না করা হয়। তার পীরবাবা নাকি বলেছিল- মৃত্যুর চার পাঁচ দিন পর সে আবার জীবিত হবেন। এই বিশ্বাসে আমার মেয়েরা তার মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রাখে। তাদের ভয়ে আমিও কাউকে কিছু বলতে পারিনি।’
এ বিষয়ে মনোহরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রহস্যজনক মৃত্যুর বিষয়টি কেন গোপন রাখা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করছেন পুলিশ।

নিহতের স্বামী ও চার মেয়েকে আটক করে চিকিৎসার জন্য মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। চিকিৎসা শেষে নিহতের স্বামী মুক্তার হোসেনকে পুলিশ জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন। এ দিকে আটককৃত মেয়েদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।