মুরসি কী কম বুঝ ছিলেন তাই নামাজী সিসিকে সেনা প্রধান করেন?
শফি আহমেদ
নোবেল বিজয়ী মিশরীয় বিজ্ঞানী আল বারাদির এই লেখাটার অনুবাদ সারা মুসলিম বিশ্ব ছড়ানো হচ্ছে বলে মনে হয়। বিষয়টা অত্যন্ত সময় উপযোগী এবং ভাবিবার বিষয়। তাতে আমরা তথা মুসলিম উম্মাহ উপকৃত হব বলে আমার বিশ্বাস।
প্রথমে আমরা বারাদির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই মুরসি ও বর্তমান মুসলিম আদর্শ বাদী সংগঠন গুলোর প্রতি তাঁর রায় গুলোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করা যাক। তিনি বলেছেন মুরসি কম বুঝ ছিলেন। তিনি আরো বলেন:
রাসূল (সাঃ) কী নামাজ বেশি পড়ছেন দেখে ইবনে উবাইকে সেনা প্রধান করেছেন?
এই হলো! বর্তমান ইসলামী নেতাদের নেতৃত্বের অথর্ব অচল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নেতৃত্বের কাইটেরিয়া৷৷৷
তারা তাদের সাংগঠনিক সিলেবাসের ভুলভাল
বই পড়ে শিখেছে নামাজ ইসলামের মূল মানদন্ড৷৷
চিন্তা চেতনা ইসলাম পন্থী কিনা সেটা দেখেনা৷৷
একই কারণে আলজেরিয়ার ইসলামী সালভেশন
ফ্রন্টের পতন হয়েছে৷৷
এসব সরলমনা ইসলামী হাবলা গাবলা অতি নৈতিক
নেতৃত্ব দিয়ে কিভাবে তারা পৃথিবীতে টিকে থাকবে?
আমি যদি জানতাম মুরসি মানুষকে এতটা বিশ্বাস
করে বোকামী করার অভ্যাস চর্চা করে ৷৷সরলমনা অতি সূফী আদর্শিক ভদ্র মানুষ৷৷
তাহলে আরব বসন্তের নেতৃত্ব দিতে মিশরের রাজ
পথে নামতাম না৷৷
একজন নোবেল পদক প্রাপ্ত বিজ্ঞানী হিসেবে
সম্মান নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিতাম৷৷
ড্রাইবারী করতে না জানলে গাঁড়ি নিয়ে ময়দানে
নামা ঠিক নয়৷৷
আসলে ইসলামী সংগঠন গুলি চৌকষ নেতৃত্বের
পরিবর্তে দরবেশ নেতৃত্ব তৈরির বই পড়ায়৷৷
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলে রাসূল (সা:)নিজ হাতে তাঁর সাহাবীগণ ঘটন করতে সহযোগিতা করেছেন। নামাজী সাহাবীরা মৌলিক গুণে গুণী হওয়ার পরও অসংখ্য বাড়তি গুনে গুণান্বিত ছিলেন। তাই রাসূল (সাঃ) উবাই (রাঃ) কে বা আরো কাকে সেনা প্রধান করবেন তিনির যথেষ্ট চয়েস বা পছন্দ ছিল। প্রশ্ন হল মুরসির কি সেটা ছিল?
সিসি নিঃসন্দেহে ভালো সেনা এবং নিয়মিত নামাজী এটা মুরসিকে তাঁর সিদ্ধান্ত নিতে আকৃষ্ট করেছে। বেহতর হল ধর্ম এবং পার্থিব বুদ্ধি তথা মেধা উভয়টা থাকা। এ ক্ষেত্রে যদি একটির কমতি হয় তা হলে আমরা কোনটা গ্রহণ করবো?
এই প্রশ্ন, এই ধন্দ, আমাদের অনেকের, সামাজিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে আসে থাকে। এমন হয় কারণ পবিত্র কোরান মজীদে বলা হয়েছে এ জীবন পরীক্ষার লীলাভূমি।
একমত হয়ে আমরা এর উত্তরটা দিতে পারি না। আমরা দেখি কেহ ধর্ম আঁকড়ে ধরেছেন। ছুটছেন চির স্রোতস্বিনী মধুর তট ফেরদৌসের পারে। যে স্বর্গ কখনও দেখা হয়নি। অথচ অহরহ হাত ছাড়া হচ্ছে পার্থিব জীবনের অসংখ্য সুখ সমৃদ্ধি। যা সকলেরই চোখের সামনে বিরাজমান।
মনে করেন এমনি এক ধার্মিক বন্ধুকে এক পার্থিব সুখে সমৃদ্ধ মেধাবী বন্ধু বলেন। বন্ধু গোধূলি তো আসলো গেলো দিন শেষ হয়ে গেল। আর কবে সেই তারার ওপারে তোমার অদেখা স্বর্গটা সোনার দোয়ার খুলবে। আর তুমি সেথা হতে ঝরে পড়া সন্ধ্যা মালতিটা লুফে নিবে?
প্রতি উত্তরে তিনি বলিলেন বন্ধু তুমিতো বৃন্দাবন দেখেছ। আমি দেখিনি। সোনার হরিণ তোমার হাতের মুঠোয়। কিন্তু তুমি কি জানো কখন কিভাবে অতল কবরে তোমার পা ধসে পড়ে? সেখান থেকে তোমার আর সোনার পালঙ্কে ফিরা হবেনা। তখন তুমি ভাবিবে আকলের দৌড়ে তুমি এগিয়ে ছিলে। সোনার হরিণ ধরে ঘরে তুলেছ। কিন্তু তোমার অলক্ষ্যে তোমার শেষ সমাধি রচনা করা হয়েছে। তুমি সুদীর্ঘ মহা ভারত পড়ে নিলেও এই তোমার নিজের শেষ কৃতির পৃষ্টাটা তোমার অগোচর ছিল। অথচ কবর তো তোমার সামনেই ছিল। চোখ মেলিলেই তা দেখা যেত । আমার স্বর্গ তো সাত আসমানের ওপারে তা না দেখে কি খুব কম দেখলাম?
এ থেকে আমরা কী বুজলাম। ধর্মীয় বেহেস্তই শুধু গায়েব বা অদৃশ্য নয়। আমাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমাদের অদৃশ্য থেকে যায়। একটি নতুন শিশু জন্ম নিলে তাকে দেখে পিতা মাতা কত খুশি হন। তার জীবনে যে কত হাসি কান্না লুকিয়ে রয়েছে তা আমরা দেখতে পাইনা। কিন্তু মানুষ এগুতে পারে অদৃশ্য কে জয় করতে পারে।
হজরত আলী (রাঃ ) একজন শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। তিনি মেয়ে হজরত জয়নব (রাঃ) যখন জন্ম নিলেন। তিনি তাঁকে কোলে তুলে হাসলেন এবং কাঁদলেন। লোকে বললো এরূপ হাসি কান্না কেন? তিনি বলিলেন আমার এই মেয়েটা কারবালার ময়দানে আমার বংশের শেষ অবলম্বন তুলে ধরবে। সে হবে কাণ্ডারী। তাই হাসলাম। কিন্তু সে বড় পেরেশানি এবং কঠিন বিপদের সম্মুখীন হবে তাই দেখে কাঁদলাম।
রাসূল (সাঃ ) বলেছেন তিনি হলেন জ্ঞানের শহর আর হযরত আলী (রাঃ ) সেই শহরের প্রবেশ দ্বার। একটু লক্ষ করুন হযরত আলী (রাঃ ) যেমন ছিলেন জাগতিক বিদ্যা বুদ্ধি মেধায় শ্রেষ্ঠতম বীর তেমনি ছিলেন আধ্যাত্মিক বিদ্যায় শীর্ষ সর্দার। তাঁর মাঝে পার্থিব ও অপার্থিব উভয় জ্ঞানের সমন্বয় ছিল। তাই তিনি তাঁর মেয়ের ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন। তবে তখন তিনি তাঁর জুলফিকার তলোয়ার তুলে হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ ) দিকে ছুটে যাননি। মহাবীর আলী (রাঃ)-র জন্য তাঁকে দেখে নেয়া অত্যন্ত সহজ ছিল। কিন্তু তিনি মহান আল্লাহ পাক রচিত মানব জীবন নকশার গভীর তলায় পৌঁছেছিলেন এবং সেভাবেই কাজ করেছেন। আমাদেরকেও সেটা করতে হবে।
প্রখর মেধাবী বাইডেন বা পুতিন পৃথিবী জুড়ে মাতব্বরি করতে পারেন। কিন্তু ইসলামী জয় পেতে হলে আরো বেশি নিতিবান হতে হবে। কারণ সেটা হবে মানব কল্যাণের জন্য। তাতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বেঁধে আড়ালে বিলয়ন ডলার আয় করার পথ থাকেনা। অন্তরে গভীর জ্ঞানের উপলব্ধি ছাড়া এমন নীতি অর্জন করা জায়ানা। তাহলে আমরা কি দেখলাম ভালো কর্মের মধ্যে ভালো জ্ঞান অন্তর্নিহিত তাকে। তাই ইসলামে আমলকে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়।
Shofi Ahmed is a full member of Cambridge University based www.thenakedscientists.com forum.