মাঝারি মানের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
পোস্ট ডেস্ক :
বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ভারসাম্যে বা স্থিতিপত্রে মাঝারি মানের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই কমে যাওয়া ও রিজার্ভ না বাড়ার কারণে এ খাতে মাঝারি মানের ঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
সম্প্রতি মুডিসের ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ভারসাম্য সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এতে আগাম কিছু পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশের কথা উলেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভারত।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ভারসাম্যে ক্রমেই ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। কারণ দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের সংকট দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। আইএমএফের ঋণ নিয়েও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে পারছে না। এতে আগামীতে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রার দিক থেকে মাঝারি মানের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বৈদেশিক মুদ্রার আয় প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশের বাজার এখনো ততটা উš§ুক্ত নয়, রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য তেমন একটা নেই। সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনাও দুর্বল। আগামী জাতীয় নির্বাচনের কারণে উচ্চ রাজনৈতিক ঝুঁকিও রয়েছে। এসব কারণে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। বিশ্ববাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে রিজার্ভ বাড়বে, তেমন সম্ভাবনাও নেই। যেসব কারণে রিজার্ভ কমেছিল, সেসব কারণ এখনো বিদ্যমান রয়েছে। ফলে আগামীতেও রিজার্ভ আরও কমতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের ঝুঁকি সবচেয়ে কম। দেশটির অর্থনীতি বৈচিত্র্যপূর্ণ। রপ্তানি খাতও বেশ বড় ও বহুমুখী। দেশটির সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাও ভালো। সেজন্য তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার রপ্তানি খাত ছোট হওয়ার কারণে তাদের ব্যালান্স অব পেমেন্টের সংকটে পড়ার আশঙ্কা বেশি।
ভারত তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকলেও বাজার আরও উš§ুক্ত না করলে তারাও বিপদে পড়তে পারে। পাকিস্তান ও শ্রীলংকার চেয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের রপ্তানির অবস্থান ভালো থাকায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে অন্যান্য দেশের খুব একটা উন্মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই। সে কারণে বৃহত্তর বাজারের সুবিধা তারা তেমন একটা পায় না। সেই সঙ্গে তাদের বাজার ততটা উন্মুক্ত নয়, তাই দীর্ঘ মেয়াদে তাদের প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়তে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও পাকিস্তান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, বাণিজ্য অবকাঠামো, নীতি ও শ্রমের মানের ক্ষেত্রে ভারতের তুলনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া তিনটি দেশই নানা মাত্রায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতার সম্মুখীন। এতে তাদের পক্ষে অবকাঠামো ও শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা কঠিন হবে। এ কারণে চারটি দেশের ঋণমান অপরিবর্তিত রেখেছে মুডিস। বাংলাদেশের ঋণমান বি১-এ স্থিতিশীল রাখা হয়েছে। ভারতে বিএএ৩-এ স্থিতিশীল। পাকিস্তানের সিএএ৩-এ স্থিতিশীল ও শ্রীলংকার সিএ স্থিতশীল।
এর আগে গত মে মাসে মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১ করে। ২০১০ সাল থেকে ঋণমান নির্ণয় শুরু করার পর গত মে মাসেই প্রথম তারা বাংলাদেশর ঋণমান কমিয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক হাজার ৯৭৪ কোটি ডলার, ভারতের রিজার্ভ ৫৯ হাজার ৮০০ ডলার, পাকিস্তানের রিজার্ভ ৩৫০ কোটি ডলার, শ্রীলংকার রিজার্ভ ৩৫০ কোটি ডলার।