দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘বাইরের থাবা’

Published: 28 November 2023

বিশেষ সংবাদদাতা :


বিদেশিদের দাবি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হতে হবে এটা অন্যায্য চাওয়া নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি ভোট আয়োজনের নানা পদক্ষেপের মধ্যে ‘বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ও তৎপরতা দুঃখজনক বাস্তবতা’ বলেও বর্ণনা করেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘বাইরের থাবা এসেছে’ মন্তব্য করে সিইসি বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ বাঁচাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। গতকাল সোমবার আগারগাওঁয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে বিচারিক হাকিমদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এ সব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে আরেকটি দুর্ভাগ্যজনক বৈশিষ্ট হচ্ছে আমাদের নির্বাচনে বাহির থেকেও থাবা, হাত এসে পড়েছে। তারা (বিদেশী) থাবা বিস্তার করে রেখেছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ, পোশাক শিল্পসহ অনেক কিছুই রক্ষা করতে হলে এই নির্বাচনটাকে ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল করতে হবে। কারচুপি করা যাবে না।

নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বিভিন্ন বিবৃতির প্রসঙ্গ নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাকে যেভাবে ইউনাইটেড স্টেট কমান্ড করতে পারে। আমি সেভাবে ইউনাইটেড স্টেটেসে গিয়ে হুমকি-ধামকি দিতে পারছি না, পারব না। এটা আরেকটা বাস্তবতা। তবে প্রতিটি দেশের ‘সার্বভৌমত্ব’ বিষয়টিও ‘আপেক্ষিক’।

 

সিইসি বলেন, ওরা (বিদেশি) একটাই দাবি করে যে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনটা ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হতে হবে এবং কোনোরকম কারচুপির আশ্রয় নেওয়া যাবে না। এই নির্বাচনের ফেয়ারনেসকে উপলক্ষ করে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে গেছে। এটি কাঙ্খিত ছিল না। সেজন্যই বলা হয় ক্রেডিবল ইলেকশন। ইলেকশন জিনিসটা কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য, চোখে দেখা যায় না, যাবেও না। তারপরেও বলা হয় নির্বাচন ক্রেডিবল, ফ্রি হয়েছে কিনা, ফেয়ার হয়েছে কিনা। এই পাবলিক পারসেপশনের কোনো মানদণ্ড নেই। তবুও জনগণকে বলতে হবে নির্বাচন ফ্রি এবং ফেয়ার হয়েছে। সার্বিকভাবে যদি জনগণ বলে থাকে যে, এবারের নির্বাচনটা ফ্রি ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হয়েছে, তাহলে এটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আমরা একটা ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল ইলেকশন চাচ্ছি।

দেশের গত ৫০ বছরের নির্বাচনী সংস্কৃতির হালচাল তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশ সংকটে আছে; বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে আছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সমভাবে দায়িত্বশীল হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। গণতন্ত্রে আমরা স্থিরভাবে এগোতে পারেনি। সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য সবাইকে সমভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের সময় সাহসিকতা ও সততা নিয়ে বিচারিক হাকিমদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে উপ-নির্বাচনে ৫৭ সেকেন্টে ৪৩ সিল মারার ঘটনার পর নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার উদাহরণ তুলে ধরে বিচারিক হাকিমদের উদ্দেশ্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সিল মারাটা নির্বাচনের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। পেশি শক্তির ব্যবহার করা, কালো টাকা ব্যবহার করা এবং কারচুপি করা, দীর্ঘদিন ধরে চর্চার মাধ্যমে একটা অপসংস্কৃতির চর্চা হয়ে গেছে। ক্রমান্বয়ে এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আমরা নিরন্তর চেষ্ট করছি। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য নির্বাচন কমিশন যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।

প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার নিয়ে সিইসি বলেন, ভোট শুরুর ২১ দিনের আগে প্রার্থী প্রচারণা করতে পারবেন না। হয়তো সভা করতে পারবে। এর আগে কোনো প্রচারণা রকম করতে পারবেন না। এবারের নির্বাচন ঘিরে প্রথমবারের মত ৩০০টি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানিয়ে তিনি বলেন,এতে প্রমাণ হয়েছে সত্যিকার অর্থ আমরা ভিজিল্যান্সটা চাচ্ছি। বিচারকরা যেভাবে সাহসী হয়ে ভিজিল্যান্স করতে পারবেন, অনেকে সেটা করতে পারবেন না। দেশের গণতন্ত্র রক্ষার্থে বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, সাহসিকতা দিয়ে যতদূর পারেন সাহায্য করবেন। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন দেখতে চায় ভোটাররা দলে দলে ভোটকেন্দ্রে আসছেন, তারা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন এবং সেই লাইনও যেন চলমান থাকে এবং ভোটারা নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসছে।

ভোটারদের লাইন যদি থেমে থাকে তাহলে মনে করা হবে ভিতরে এই (সিলমারা) কাজটি হচ্ছে। তবেই ভোটে অবিতর্কিত ফলাফল হবে।
নিরপেক্ষ ভোটের লক্ষ্যে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের সহায়তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন এককভাবে নির্বাচন করে না, করতে পারে না।

আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের প্রথম দিন গতকাল ১০৫ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ১০৩ জন এবং পরদিন ৯২ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।