দেশে দারিদ্র্য হার কমেছে, বেড়েছে বরিশালে
পোস্ট ডেস্ক :
২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে বরিশালে। আগে কুড়িগ্রামে সর্বোচ্চ দরিদ্র্য মানুষের বাস থাকলেও এবার বরিশালে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৯ শতাংশে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে ভিডিওবার্তায় বক্তৃতা করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ের দারিদ্র্য হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে পল্লী এলাকায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ দারিদ্র্য রয়েছে। যেখানে ২০১৬ সালে দারিদ্র্য রেখা ব্যবহার করে অফিসিয়াল দারিদ্র্য হার ছিল জাতীয় পর্যায়ে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। পল্লী এলাকায় ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো ব্যাক-ক্যালকুলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে হেইজ ২০১৬ সালে দারিদ্র হার ছিল ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এতে দেখা যায়, দেশে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দারিদ্র্য হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ পয়েন্ট (হ্রাসের গতি) কমেছে।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. মো. কাউছার আহমেদ। বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বিবিএসের উপমহাপরিচালক পরিমল চন্দ্র বসু, মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন হাউচ হোল্ড ইনকাম এন্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দীপঙ্কর রায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে অতি দারিদ্র্যের ব্যাপকভাবে কমেছে। নিম্ন দারিদ্র্য রেখা ব্যবহার করে ২০২২ সালে অতি দারিদ্র্য জাতীয় পর্যায়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে পল্লী এলাকায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। যেখানে ২০১৬ সালে নিম্ন দারিদ্র্য রেখা ব্যবহার করে অতি দারিদ্র্য হার ছিল জাতীয় পর্যায়ে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মধ্যে পল্লী এলাকায় ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ব্যাক-ক্যালকুলেশন ব্যবহার করে হাইয়েজ ২০১৬ সালে অতি দারিদ্র্য হার ছিল ৯ দশমিক ৩ শতাংশ দোরিদ্র্য। দেশে ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালে অতি দারিদ্র্যের হার (৩ দশমিক ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট, হ্রাসের গতি ৩৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ) ব্যাপক ভাবে কমেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে সবোর্চ্চ দারিদ্র্য হার পাওয়া গেছে। আগে কুড়িগ্রামে সর্বোচ্চ দারিদ্র্য হার থাকলেও এবার সেটি বরিশালে গেছে। উচ্চ ও নিম্ন উভয় দারিদ্র্য রেখার মাধ্যমে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের বিভাগগুলোর মধ্যে সবোর্চ্চ। গত বছরে বরিশালে উচ্চ দারিদ্র্য রেখা অনুযায়ী দারিদ্র্য হার ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং নিম্ন দারিদ্র্য রেখা অনুযায়ী দারিদ্র্যের হার ১১ দশমিক ৮ শতাংশ পাওয়া যায়। অন্যদিকে বিভাগগুলোর মধ্যে উচ্চ দারিদ্র্য রেখা অনুযায়ী খুলনায় দারিদ্র্যের হার ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ঢাকায় নিম্ন দারিদ্র্য রেখা অনুযায়ী অতি দারিদ্র্যের হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে আয় বৈষম্যের পরিবর্তন ঘটেছে। ২০২২ সালে আয় গিনি সহগ অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে আয় বৈষম্য শূণ্য দশমিক ৪৯৯, পল্লি এলাকায় শূন্য দশমিক ৪৪৬ এবং শহর এলাকায় শূন্য দশমিক ৫৩৯, যা ২০১৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে ছিল শূণ্য দশমিক ৪৮২, পল্লি এলাকায় শূণ্য দশমিক ৪৫৪ এবং শহর এলাকায় শূন্য দশমিক ৪৯৮। ২০১০ সালে জাতীয় পর্যায়ে গিনি সহগ ছিল শূন্য দশমিক ৪৫৮, পল্লী এলাকায় শূন্য দশমিক ৪৩১ এবং শহর এলাকায় শূন্য দশমিক ৪৩১ এবং শহর এলাকায় শূন্য দশমিক ৪৫২। উচ্চ আয় বিশিষ্ট শ্রেণির আয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২২ সালে আনুমানিক ১৪ দশমিক ১ শতাংশ খানার একজন সদস্য ছিলেন যারা গত ১২ মাসে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। এটি ২০১৬ ও ২০১০ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ যার হার ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। হাইয়েজ ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে ২১ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যক্তি মাঝারি বা মারাত্বক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। যেখানে ২০২২ সালে পল্লী এলাকায় এ হার ছিল ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দেশে ২০২২ সালে ১ দশমিক ১৩ শতাংশ ব্যক্তি মারাত্বক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ছিলেন।