অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র : পররাষ্ট্র সচিব

Published: 15 September 2024

বিশেষ সংবাদদাতা :


পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাতেও সংস্কার দেখতে চায় দেশটি।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডারসেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছে। কিছুক্ষণ আগে তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছি। বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাণিজ্য সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলেছি। ছাত্র-জনতার চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে সূচিত বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সরকার এরইমধ্যে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেসব পদক্ষেপ সম্পর্কে আমরা প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেছি।

এম জসীম উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গত দেড় মাসের কার্যক্রমে আনুষ্ঠানিক সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আগামীতেও সংস্কারে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। বৈঠকে শ্রম পরিবেশ, মানবাধিকার সুরক্ষা, রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তাসহ নানান বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও ইউএসএআইডির মধ্য বার্ষিক সহযোগিতা চুক্তিটি আজ স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলেছি। ছাত্র-জনতার চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে সূচিত বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সরকার এরইমধ্যে যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে, সে সম্পর্কে প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছি।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে তারা জানার আগ্রহ দেখিয়েছেন। দ্রুত অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি এ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার বিবেচনায় আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাতে সংস্কারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। একই সঙ্গে শ্রম পরিবেশ, মানবাধিকার সুরক্ষা, রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তাসহ নানান বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।

পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বড় আকারে আর্থিক খাতে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পাচার হওয়া অর্থসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে, সেটি হয়তো আমরা ব্যবহার করবো। কিন্তু আলাপ-আলোচনা সবে শুরু হয়েছে। এর চূড়ান্ত রূপ পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

সুনির্দিষ্ট কোনও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজকে গভর্নরের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে। সেখানকার বৈঠকে হয়তো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো আলোচিত হতে পারে।

মার্কিন দল কী আশ্বাস দিয়েছে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি পররাষ্ট্র সচিব, প্রথম যে আশ্বাস সেটি হচ্ছে— অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে তারা কাজ করতে চায় এবং সেটির প্রতিফলন হিসেবে সরকার গঠনের দ্বিতীয় মাসের প্রথমে তারা প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সংস্কারের যেসব খাত চিহ্নিত করেছি, তার সবগুলো খাতে তারা সার্বিকভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

ভারত থেকে কোনও বার্তা নিয়ে এসেছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতের দূতাবাস আছে এবং ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাস আছে। আমরা যদি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, এগুলো আমাদের জন্য প্ল্যাটফর্ম।’

প্রতিবেশী একটি দেশ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা আমরা চেয়েছি কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, সেটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। এ ধরনের কোনও আলোচনায় আমরা মনে হয় এর আগে কখনও যাইনি। আমি অন্তত এ ধরনের কোনও আলোচনা করিনি।’