আসামি ১২ বছর ধরে ইতালিতে, গুলি ছুড়েছেন ঢাকায়
পোস্ট ডেস্ক :
মাদারীপুরের চরমুগরিয়া এলাকার বাসিন্দা সারাফাত ইসলাম ডলার দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ থাকেন ইতালির মিলান শহরে। করেন বিএনপি’র রাজনীতি। তার পিতা রাজা জমাদ্দার একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। অসুস্থতার কারণে বাসা থেকেও বের হতে পারেন না। অথচ তাদের নামে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলার বিবরণ মতে, তারা গুলিও ছুড়েছেন। সেই গুলিতেই মারা গেছে এক যুবক। তবে স্থানীয়দের দাবি, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে এ মামলা করা হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকার সিএমএম আদালতে মনিরুজ্জামান মনির নামে এক যুবক নিহেতর ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় ২৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ জন মাদারীপুরের বাসিন্দা। অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ। এই ৫ জনের ঠিকানা ঢাকায় হলেও ২১ জনের কেউই ঢাকার বাসিন্দা নন। স্থানীয়দের দাবি, এলাকার রাজনৈতিক বিরোধ ও ব্যক্তিগত শত্রুতাকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরের ২১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, আসামির নাম বাদ দিতে আওয়ামী লীগের সমর্থিত মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক এক ভাইস চেয়ারম্যান একাধিক আসামির কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর রাজধানীর ফুলবাড়িয়া মার্কেটের সামনে পুলিশের গুলিতে মনিরুজ্জামান মনির নিহত হয়। তিনি রাজৈর উপজেলার শাখারপাড় এলাকার নুরুল ইসলাম মোল্লার ছেলে। তাকে মামলার এজাহারে রিকশাচালক উল্লেখ করা হয়। এই ঘটনায় তার বোন নিলুফার ইয়াছমিন বাদী হয়ে গত ৩রা অক্টোবর ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। পরে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য শাহবাগ থানাকে নির্দেশ দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আসাদুজ্জামান জুয়েল।
নিলুফার ইয়াছমিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আপাতত মামলার বিষয় কিছু বলতে চাই না। পরবর্তীতে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। মামলা দায়েরের আগে নিহত মনিরুজ্জামান মনিরের বাবা নুরুল ইসলাম মোল্লা জানান, গত ৫ই আগস্ট সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন মনিরুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু আলম। তারাও অন্যদের দেখাদেখি গণভবনে যান। দু’জন লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় উল্লাস করে সন্ধ্যার আগে গণভবন থেকে বের হয়ে আসেন। পরে তারা পুলিশ সদর দপ্তর সংলগ্ন ফুলবাড়িয়া এলাকায় গিয়ে একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষ করার পর বের হয়ে দেখেন তাদের মোটরসাইকেলটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এরমধ্যেই পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে শুরু হয় গোলাগুলি। মনিরুজ্জামান ও আলম জীবন বাঁচাতে ছোটাছুটি শুরু করেন। এ সময় মনিরুজ্জামান গুলিবিদ্ধ হন ও আলম মারধরের শিকার হন। পরে গুরুতর অবস্থায় দু’জনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই দিন রাতেই মনিরুজ্জামান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আলম কাজী বলেন, আমরা গণভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ি। পতাকা হাতে নিয়ে ছবি তুলি। কতো স্মৃতি আমাদের। ফেরার পথে ফুলবাড়িয়ায় যখন পুলিশের সঙ্গে লোকজনের সংঘর্ষ হচ্ছিলো, আমরা তখন মাঝখানে পড়ে যাই। চারদিক থেকে তখন গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিলো। কিছু লোক লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের ওপর প্রথম হামলা চালায়। কিছুক্ষণ পরে দু’জন দু’দিকে সরে পড়ি। এরপর কিছু লোক আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে শুনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মনির আর বেঁচে নেই। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, মামলার তদন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খু বিশ্লেষণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। ঘটনার সময় যদি কেউ দেশের বাইরে থাকে তাও তদন্তে উঠে আসবে। নির্দোষ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সূত্রমতে, আসামিদের প্রথম ৫ জন ছাড়া সবাই মাদারীপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। এলাকায় জমিজমা ও ব্যবসায়িক বৈরিতা ও ব্যক্তিগত শত্রুতা কারণে তাদের আসামি করা হয়েছে। মামলার ১০ নম্বর আসামি মাদারীপুরের চরমুগরিয়া এলাকার বাসিন্দা সারাফাত ইসলাম ডলার একজন প্রবাসী। তিনি ১২ বছর ধরে ইতালির মিলান শহরে আছেন। তার বাবা মামলার ১২ নম্বর আসামি রাজা জমাদ্দার একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী। স্থানীয় মাসুদ সরদার বলেন, সারাফাত ইসলাম ডলার ১২ বছর ধরে ইতালিতে থাকেন। আর তার বাবা অসুস্থ। ঘর থেকেও বের হতে পারেন না। তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়েছে। জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব অহিদুজ্জামান খান বলেন, মাদারীপুরের একজন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কুপরামর্শ দিয়ে এই মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সেই ভাইস চেয়ারম্যান মূলত আওয়ামী লীগের লোক। তার সঙ্গে যাদের দ্বন্দ্ব তাদের হয়রানি করার জন্য এই মামলা দায়ের করিয়েছেন। মামলার আসামি সারাফাত ইসলাম ডলার একজন বিএনপি নেতা। ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় বিএনপি নেতা আসামি হওয়া দুঃখজনক।