যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি করছে জার্মানি
পোস্ট ডেস্ক :
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বুধবার যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন। সেখানে দুই দেশের নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করবেন তিনি। জার্মানি ও যুক্তরাজ্য দুই দেশই ন্যাটোর সদস্য। দুই দেশই প্রতিরক্ষাখাতে প্রচুর অর্থ খরচ করে।
তাদের মধ্যে নতুন ‘ট্রিনিটি হাউস চুক্তি’ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা আরো বাড়াবে।
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস ও এবং যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি গত জুলাইতে বার্লিনে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এবার তারা সেই চুক্তিতে সই করবেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের দুই বছর পর এবং যুক্তরাজ্যে সরকার পরিবর্তনের কয়েক মাসের মধ্যে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই এই চুক্তি সেরে ফেলছে জার্মানি ও যুক্তরাজ্য।
ইউরোপে ন্যাটোর শরিক দেশগুলিও এই চুক্তির উপর খুবই আগ্রহ নিয়ে নজর রাখছে।
পিস্টোরিয়াস যা বলেছেন
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এই চুক্তির ফলে ইউরোপে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ফাঁক বন্ধ করা সম্ভব হবে। তিনি জার্মানি থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে জানিয়েছেন, জল, স্থল, আকাশ ও সাইবার দুনিয়ায় যৌথ প্রকল্প নিয়ে আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে নিতে পারব। এর ফলে ন্যাটো এবং ইউরোপ শক্তিশালী হবে।
তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর আমরা ইউরোপের নিরাপত্তাকে অবহেলা করতে পারি না। পিস্টোরিয়াস জানিয়েছেন, এখন ন্যাটোর পূর্ব দিক রক্ষা করার জন্য আরো ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সময় এসেছে। সেখানে প্রতিরক্ষার যে খামতি আছে, তা দূর করতে হবে। বিশেষ করে দূরপাল্লায় গিয়ে আঘাত করতে পারে এমন অস্ত্রের ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিলি বলেছেন, যে চুক্তি সই হতে যাচ্ছে তা জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা।
এটা ইউরোপের নিরাপত্তাও বাড়াবে।
তিনি জানিয়েছেন, এই চুক্তিতে অস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। জার্মানির সেনার সঙ্গে যে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে তা অভূতপূর্ব। এর ফলে দুই দেশের নীতি রক্ষিত হবে এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নতি হবে। জার্মানির অস্ত্র প্রস্তুতকারক রাইনমেটাল যুক্তরাজ্যে একটা নতুন কারখানা খুলবে, সেখানে চারশজনের চাকরির সুযোগ হবে।
রাশিয়ার আগ্রাসন একটা বিষয় দেখিয়ে দিয়েছে, তা হলো, ইউরোপের অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের উৎপাদন ক্ষমতা প্রয়োজনের থেকে কম। ব্রিটেন ও জার্মানি দুই দেশই ইউক্রেনকে অস্ত্র সাহায্য করেছে, ফলে তাদের নিজেদের ভাঁড়ারে টান পড়েছে।
যুক্তরাজ্যের মনোভাবে বদল
বার্লিনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই চুক্তিকে ইউরোপের প্রতি যুক্তরাজ্যের বদলে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গি বলে জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের লেবার পার্টি জুলাইতে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে। ২০১০ সাল যুক্তরাজ্য ইইউ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পর তারা আবার ক্ষমতা হাতে পেল। তারপর থেকে ইউরোপের দেশগুলির মনোভাবেও বদল এসেছে। তবে স্টারমার বলে দিয়েছেন, তারা আর ইইউ-তে ঢুকবেন না। সেক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলো যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সব সহযোগিতার ক্ষেত্রে কতদূর যাবে সেই প্রশ্ন রয়েছে।
দুই সরকার জানিয়েছে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে ভবিষ্যতে ইউরোপের দেশগুলোও যোগ দিতে পারবে। ইউরোপের আপেক বড় শক্তি ও অস্ত্র উৎপাদক দেশ হলো ফ্রান্স। ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে চুক্তি রয়েছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জার্মানির এই চুক্তি ভবিষ্যতে তিন দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিল।