কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট

Published: 19 November 2024

পোস্ট ডেস্ক :


বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচনে জয়ের পরই জয়ী প্রার্থী অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এ বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে জয় পাওয়ার এক দিন পরেই দায়িত্ব গ্রহণ করেন কিয়ের স্টারমার। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি একটু ভিন্ন। ৫ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন রিপাবলিকান নেতা ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু জয়ী হওয়ার পর ক্ষমতা পেতে ট্রাম্পকে অপেক্ষা করতে হবে ৭৬ দিন। কিন্তু কেন? ভয়েস অব আমেরিকার এক খবরে বলা হয়েছে, অন্যান্য সংসদীয় গণতন্ত্রের মত বৃটেনের বিরোধীদল একটি ‘ছায়া সরকার’ গঠন করে, যার মাধ্যমে তারা নির্বাচনে জয়ের পরই ক্ষমতা গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে সেরকম কোনো ব্যবস্থা নেই। আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয়। তাকে সরকারের বিশাল প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ করতে হবে। প্রায় সাত লাখ কোটি ডলার বাজেটের এই প্রশাসনে ৩৫ লাখ বেসামরিক এবং সামরিক লোক কাজ করে, যাদের মধ্যে হাজার হাজার লোককে নিয়োগ করবেন নতুন প্রেসিডেন্ট।

সেন্টার ফর প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রান্সিশন-এর সভাপতি ভ্যালেরি স্মিথ বয়েড বলেছেন, দেশ শাসনের জন্য প্রস্তুত হওয়াটা এক বিশাল কাজ। এক প্রেসিডেন্ট থেকে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়কে বলা হয় ট্রান্সিশন পিরিয়ড। নভেম্বরে নির্বাচনের দিন থেকে জানুয়ারিতে ইনোগুরেশন বা অভিষেক দিবস পর্যন্ত জটিল ১১টি সপ্তাহ হচ্ছে আমেরিকার গণতন্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তর। এই সময়টার কাজ হচ্ছে এক প্রশাসন থেকে আরেক প্রশাসনের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তারা দায়িত্ব নেয়ার পর যাতে প্রথম দিন থেকেই কাজ শুরু করতে পারেন। এমনটাই জানিয়েছেন কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ১৪ নর্থ স্ট্রাটেজিস-এর পরিচালক মাইকেল শুরকিন। তিনি ২০০৮-০৯ সালে জর্জ বুশ থেকে বারাক ওবামার ট্রান্সিশনের সময় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর বিশ্লেষক ছিলেন।

ইতিহাসবিদ রাসেল রাইলির মতে, আমেরিকার ইতিহাসের অধিকাংশ সময় জুড়ে ট্রান্সিশন সময়টাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হতো না। ট্রান্সিশন পিরিয়ডটাও এক সময়ে চার মাস পর্যন্ত লম্বা ছিল। এই ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রান্সিশন কথাটার প্রথম উল্লেখ ১৯৪৮ করা হয় বলে রাইলি চিহ্নিত করেছেন। তিনি দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় যুক্তি দেখান যে, প্রথম দিন থেকেই বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নতুন প্রেসিডেন্ট এবং তার টিম প্রস্তুত না থাকার ঝুঁকির কারণে এই প্রক্রিয়া ১৯৬০-এর দশকে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

বর্তমানে, ট্রান্সিশন একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া, যার পেছনে যেমন রয়েছে ঐতিহ্য এবং রীতি, তেমনি আছে আইন এবং নিয়মাবলী। যেমন, নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মধ্যে হোয়াইট হাউসে বৈঠক। এই ঐতিহ্য শুরু করার জন্য প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। ট্রুম্যান ১৯৫২ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তার তিক্ত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ডয়াইট ডি আইজেনহাওয়ারকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ করেছিলেন। এই উদাহরণ পরবর্তী সব প্রেসিডেন্ট অনুসরণ করেছেন, শুধু ট্রাম্প ছাড়া। ট্রাম্প ২০২০ সালে পরাজিত হওয়ার পর প্রতিপক্ষ জো বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ করেননি।

নির্বাচনের ছয় মাস আগে, প্রেসিডেন্ট একটি ট্রান্সিশন সমন্বয় কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিটি ফেডেরাল সংস্থা বা এজেন্সি একটি করে ট্রান্সিশন পরিচালক নিয়োগ করে। সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে এজেন্সি প্রধানদের সকল অস্থায়ী কর্মীদের পরিবর্তন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে। অক্টোবর মাসের ১ তারিখের মধ্যে, জেনেরাল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ), যারা ফেডেরাল সরকারের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তদারকি করে, ট্রান্সিশন টীমের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে তাদের অফিস এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করবে। যদিও এগুলো সাম্প্রতিক সময়ে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আমেরিকান ইতিহাসের বেশির ভাগ সময় জুড়েই এক প্রেসিডেন্ট থেকে আরেক প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়মমাফিক ছিল।

গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) বাইডেন ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ করেন, যেখানে তারা ক্যামেরার জন্য পোজ দেন এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ট্রান্সিশনের অঙ্গীকার করেন। হোয়াইট হাউস তাদের বৈঠককে ‘খুবই সৌহার্দপূর্ণ, খুবই শোভন এবং কার্যকর’ বলে বর্ণনা করে। তবে হোয়াইট হাউসে দেখা-সাক্ষাৎ নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মূল কাজ না। তিনি যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দেবেন তার মধ্যে আছে- নতুন প্রশাসনে লোক নিয়োগ করা। সেন্টার ফর প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রান্সিশন অনুযায়ী, নতুন প্রশাসনকে চার হাজারের বেশি পদ পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত ১,২০০জনকে সেনেটে অনুমোদন পেতে হবে। যাদের রাজনৈতিক ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছিল, তারা নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার আগে বা ইনোগুরেশনের দিন পদত্যাগ করেন। এই বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য সময় এবং সম্পদ প্রয়োজন হয়। রাজনৈতিক পদের জন্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে হবে, তাদের যোগ্যতা যাচাই করতে হবে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়।