বিশ্বজুড়ে চব্বিশের যত বিমান দুর্ঘটনা

Published: 31 December 2024

পোস্ট ডেস্ক :


নানা ঘটনার সাক্ষী ২০২৪। যার বেশ কিছু ঘটনা ছিল খুব মর্মান্তিক। বিশেষ করে বছর জুড়ে ধারাবাহিকভাবে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সময় পার করেছে বিমানে ভ্রমণ করা যাত্রীরা। বছরের প্রায় প্রতি মাসেই শোনা গেছে বিমান দুর্ঘটনার মতো হৃদয়বিদারক সব ঘটনা। বছরের শেষ মাসেই প্রাণ হারিয়েছেন ২২০ জন বিমান যাত্রী। এতে এয়ার সংশ্লিষ্ট খাতের যানগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। সাধারণ যাত্রীদের মাঝে তৈরি হয়েছে নানা আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা। বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করেছে অনলাইন এনডিটিভি। সেখানে ২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

যে দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ১৭৯ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে: ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার খবরে হতবাক হয়েছে বিশ্ব। গত ২৮ ডিসেম্বর সকালে ১৮১ জন যাত্রী নিয়ে বিধ্বস্ত হয় দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিমান। জেজু এয়ালাইন্সের ওই বিমানটিতে থাকা ২ জন যাত্রী ছাড়া বাকি সকলেই প্রাণ হারান। তবে যারা বেঁচে ফিরেছেন তাদের স্বাভাবিক জীবন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। রাজধানী সিউলের অদূরে মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের সময় গিয়ার হ্যান্ডেল অকেজো হয়ে যাওয়ায় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে প্রকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় বোয়িং ৭৩৭-৮০০ নামের বিমানটি। আর এতেই বিমানটিতে থাকা ১৭৫ যাত্রীর সকলেই প্রাণ হারান।

আজারবাইজানের বিমান বিধ্বস্তে নিহত ৩৯: গত ২৫ ডিসেম্বর আজারবাইজানের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩৯ জন প্রাণ হারান। বাকু থেকে রাশিয়াতে যাওয়ার পথে কাজাখস্তানের আকতাউ নামের স্থানে বিধ্বস্ত হয় আন্তর্জাতিক ওই ফ্লাইটটি। এতে ওই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। তিনি বলেছেন, রাশিয়ায় মাটি থেকে গুলি চালানোর কারণে যাত্রীবাহী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্ভবত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণের সময় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।

স্কটল্যান্ডে বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট নিহত: ডিসেম্বরের বিমান দুর্ঘটনার আরেকটি আলোচিত ঘটনা এটি। গত ২৩শে ডিসেম্বর স্কটল্যান্ডের ফাইফ বিমানবন্দরের কাছে একটি ছোট বিমান বিধ্বস্ত হয়, যাতে ৫০ বছর বয়সী পাইলট নিহত হন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই কিছু অস্বাভাবিক কৌশল অবলম্বন করে, তারপর সেটি মাঠে পড়ে যায়।

ব্রাজিলে ব্যক্তিগত বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ১০: গত ২২ ডিসেম্বর, ব্রাজিলের গ্রামাডোতে একটি ব্যক্তিগত বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন বিমানের চালক ব্রাজিলিয়ান ব্যবসায়ী লুইজ ক্লদিও গ্যালেজি, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে এবং গ্যালেজি পরিবারের আরও পাঁচ সদস্য। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ছোট বিমানটি একটি ভবনের চিমনিতে আছড়ে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় মাটিতে থাকা কমপক্ষে ১৭ জন আহত হন।

পাপুয়া নিউ গিনি দ্বীপপুঞ্জের দুর্ঘটনায় নিহত ৫: একই দিনে পাপুয়া নিউ গিনিতে বিধ্বস্ত হয়েছে একটি বিমান। পাপুয়া নিউ গিনিতে নর্থ কোস্ট এভিয়েশনের ব্রিটেন-নর্মান বিএন-২বি-২৬ মডেলের একটি বিমান আইল্যান্ডার মোরোবে প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়। ওয়াসু বিমানবন্দর থেকে লায়ে-নাদজাব বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে বিমানটিতে থাকা পাঁচজনই দুর্ঘটনায় নিহত হন।

ব্রাজিলে নিখোঁজ বিমান, ২ জনের মৃত্যু: ব্রাজিলের পোর্তো ভেলহো থেকে মানাউস যাওয়ার পথে একটি সেসনা বিমান নিখোঁজ হয়ে যায়। ক্রিসমাসের দিন আমাজন রেইনফরেস্টে বিমানের ধ্বংসাবশেষ সহ নিখোঁজ পাইলট এবং তার যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

হাওয়াই দুর্ঘটনায় নিহত ২: ১৭ ডিসেম্বর, হাওয়াইয়ের হনুলুলুর ড্যানিয়েল কে ইনোয়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হয় কামাকা এয়ার এলএলসি পরিচালিত একটি বিমান। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় উভয় পাইলটই নিহত হন। বিমানটি একটি নির্দেশনামূলক উড্ডয়নে ছিল বলে জানা গেছে এবং উড্ডয়নের পরপরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

আর্জেন্টিনায় দুর্ঘটনায় নিহত ২: একই দিনে আর্জেন্টিনার সান ফার্নান্দো বিমানবন্দরের কাছে চ্যালেঞ্জার ৩০০ নামের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনাতেও উভয় পাইলট নিহত হন। বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে একটি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায় বলে জানা গেছে।

থাইল্যান্ডে চার্টার বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৯: সুবর্ণভূমি থেকে ত্রাতগামী থাই ফ্লাইং সার্ভিসের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ বছরের ২৩শে আগস্ট ব্যাংককের ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত বিধ্বস্ত হওয়া ওই বিমানের ৯ জন আরোহীর সকলেই নিহত হন।

নেপালে ছোট বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ১৮: নেপালের সৌর্য এয়ারলাইন্সের একটি ছোট যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয় এ বছরের ২৪ জুলাই। কাঠমান্ডু থেকে পোখরা বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয়ে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এতে নিহত হন ১৮ জন আরোহী। অলৌকিকভাবে ক্যাপ্টেইন নামের একজন বেঁচে যান।

মালাউইয়ের বেসরকারি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ১০: মালাউইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাউলোস ক্লাউস চিলিমা এবং সাবেক ফার্স্ট লেডি শানিল জিম্বিরি সহ আরও নয়জন নিহত হন। এ ঘটনা ঘটেছে ১০ জুন। লিলংওয়ে থেকে মজুজু যাওয়ার পথে ভ্রমণকারী সামরিক বিমানটি বিধ্বস্ত হলে বিমানে থাকা সকলেই প্রাণ হারান।

ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে নিহত ৭: এ বছরের মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসি। যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত হেলিকপ্টারে তার সঙ্গে থাকা বাকি ছয়জনও প্রাণ হারিয়েছিলেন। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি আজারবাইজান সীমান্তের কাছে ভার্জেকান অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়।

কানাডায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৬: ২৩ জানুয়ারি কানাডার উত্তর-পশ্চিমের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফোর্ট স্মিথের কাছে নর্থওয়েস্টার্ন এয়ারের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে প্রাণ হারান ছয়জন। দুর্ঘটনায় চার যাত্রী এবং দুই নর্থ ওয়েস্টার্ন এয়ার লিজ ক্রু সদস্য নিহত হন। বেঁচে ফেরেন একজন।

জাপানের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৫: ২ জানুয়ারি টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরের রানওয়েতে জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের সঙ্গে কোস্টগার্ডের অন্য আরেকটি বিমানের সংঘর্ষ হয়। এতে বিমানটিতে থাকা ৩৭৯ জন যাত্রী বেঁচে গেলেও কোস্টগার্ডের বিমানে থাকা ছয় ক্রুর পাঁচজনই নিহত হন।