ইসরাইলকে যতদিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ সমর্থন দেবে ততদিন গণহত্যা বন্ধ হবে না
পোস্ট ডেস্ক :
গাজায় অবিরাম বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। রবিবার গাজা উপত্যকা জুড়ে হামলায় কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ছয় ভাইও আছেন। তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের খাবার সরবরাহ করছিলেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বলছে, গাজা শহরের আল-আহলি আরব হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলার পর চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে এক ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ওদিকে, ইয়েমেনি কর্মকর্তারা বলছেন- রাজধানী সানার কাছে মার্কিন হামলায় ছয়জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইসরাইলের প্রধান বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৫০,৯৪৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১৬,১৫৬ জন আহত হয়েছেন। সরকারি মিডিয়া অফিস তাদের মৃতের সংখ্যা আপডেট করে ৬১,৭০০ জনেরও বেশি বলে জানিয়েছে। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকে মৃত বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের জন্য তহবিল বৃদ্ধি করবে ইইউ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) জন্য প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ইউরো (১.৮ বিলিয়ন ডলার) তিন বছরের প্যাকেজের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করবে। একজন শীর্ষ ইউরোপীয় কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ইউরোপীয় কমিশনার ডুবরাভকা সুইকা বলেছেন, ইইউ আশা করে যে এই তহবিলের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন আনতে পারবে। এই তহবিল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করতে পারে। ফিলিস্তিন গত সপ্তাহে বলেছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি আমদানি কর থেকে সংগৃহীত প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার কর-রাজস্ব আটকে রেখেছে। ইসরাইল বার বার ফিলিস্তিনি অর্থায়নের উপর তার নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে বা শাস্তি দিয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ইসরাইলি-অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ শাসন করে আসছে। কিন্তু তারা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে জেনিনে সাম্প্রতিক সহিংস অভিযানে ভূমিকার জন্যও সমালোচনা রয়েছে।
দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৫
ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী খান ইউনিসের খুজা’আ শহরে একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে। তাতে কমপক্ষে পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, হতাহতদের ইউরোপীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাফাহ উপকূলে ইসরাইলি গুলিতে একজন জেলে আহত হয়েছেন। অন্যদিকে রাফাহ-এর উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলি সেনারা আরও আবাসিক বাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে।
ইসরাইলকে সমর্থন দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন- বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরোধিতা করে। কিন্তু ‘এই গণহত্যা’ ততক্ষণ শেষ হবে না, যতক্ষণ না আমেরিকা এবং ইউরোপ ইসরাইলকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
আনাদোলু এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, রবিবার ফিদান বলেন- এখন পর্যন্ত বর্তমান গণহত্যার ধারাবাহিকতা মার্কিন সমর্থনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে গৃহীত নীতিমালার কারণে। জানুয়ারিতে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেন ফিদান। তিনি বলেন- তিনি আশা করেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন ‘স্থায়ী শান্তি অর্জনের দিকেও পদক্ষেপ নেয়া হবে। সমস্ত কূটনৈতিক মহল এই বিষয়ে একমত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনকে আরও অবহিত করা দরকার, এবং এই চলমান যুদ্ধের ঝুঁকিগুলি আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যাখ্যা করা দরকার।
মন্ত্রী ফিদান বলেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু দিনশেষে, যতক্ষণ পর্যন্ত ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে বৃহত্তর পুঁজি এবং রাজনৈতিক শক্তি কেন্দ্রীভূত, সেখান থেকে সমর্থন অব্যাহত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটা স্পষ্ট যে মানবতার বিরুদ্ধে এই অপরাধ, এই গণহত্যা, শেষ হবে না। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর হবে, কেবল স্বল্পমেয়াদে নয়, দীর্ঘমেয়াদেও।