কোন ভেষজ চায়ের কী পুষ্টিগুণ
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে চা খাওয়ার অভ্যাস নেই এমন মানুষ কমই আছে। আমাদের অনেকেরই সকালে উঠে এক কাপ গরম চা না হলে যেন দিনটাই ভালো যায় না। এমনকি বৃষ্টি ভেজা দিনে শরীর ও মনকে চাঙ্গা করতে চাই শুধু এক কাপ চা। চায়ের এমনই অনেক গুণ রয়েছে।
বাজারে এখন নানা ধরনের চা পাওয়া যায়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভেষজ চা। শরীর ভালো রাখতে অনেকেই ভেষজ চায়ের ওপর নির্ভরশীল। শুধু মনের শান্তিতে চা পান নয়। এখন নানা কারণে ভেষজ চা পান করছে স্বাস্থ্য সচেতনরা। কারণ ভেষজ চায়ের রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ।
এবার জেনে নিন কোন ভেষজ চায়ের মধ্যে কী ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে-
আদা চা: এক চা-চামচ আদা কুচি, দুটি লবঙ্গ, এক ইঞ্চি দারুচিনি থেঁতলে দুই কাপ পানি দিয়ে ফোটান। এরপর এতে কমলালেবুর খোসা মেশান। কম আঁচে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে এতে দেড় চামচ মধু মিশিয়ে খান। এতে জ্বর-সর্দি-গলা ব্যথায় আরাম পাবেন।
তুলসি চা: এক কাপ পরিমাণ পানিতে এক মুঠো তুলসি পাতা ফুটতে দিন। টগবগ করে ফুটলে আঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট ফোটান। এরপর এতে এক চামচ মধু আর দুই চামচ লেবুর রস মেশান। মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে শক্তি জোগাবে, লেবুতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এছাড়া তুলসির প্রভাবে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ কমবে। নিয়মিত এই চা খেলে প্রদাহের প্রবণতা কমবে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
দারুচিনি চা : দারুচিনি, গোলমরিচ, লেবুর রস ও মধু দিয়ে ভেষজ চা তৈরি করতে পারেন। এক চামচ দারুচিনির গুঁড়ার সঙ্গে এক চামচ গোলমরিচ গুঁড়া, এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ মধুর মধ্যে এক কাপ ফুটন্ত পানি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ছেঁকে নিন। দারুচিনিতে থাকা কুমারিন, গোলমরিচের পিপারিন প্রদাহের প্রবণতা কমায়। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লেবুর ভিটামিন সি ও একই কাজ করে। মধু শরীরে শক্তি বাড়ায়। তবে কুমারিন বেশি খাওয়া ঠিক নয়। এতে লিভারের ক্ষতি হতে পারে।
অশ্বগন্ধা চা: রোজ সকালে বা বিকালে এক কাপ অশ্বগন্ধার চা খেতে পারেন। এক কাপ ফুটন্ত পানিতে এক চা-চামচ অশ্বগন্ধা মূলের গুঁড়া দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। তারপর সেটা ছেঁকে লেবুর রস ও মধু দিয়ে খান। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি প্রদাহের প্রবণতা কমবে। অশ্বগন্ধায় জীবাণুনাশক গুণও আছে। এটি মানসিক চাপ-অবসাদ ও বয়সজনিত ক্ষয়-ক্ষতির হার কমায়। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ সাইকলোজিকাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই চা খেলে খুব সহজে সতেজ ও ফুরফুরে হওয়া যায়।
ক্যামোমাইল চা: সুন্দর গন্ধের জন্য মুড ভাল করতেই খাওয়া হয় ক্যামোমাইল চা। তবে পেটের অস্বস্তি, আলসার, ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাব কাটাতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
হলুদ চা: আধ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা ও সামান্য গোলমরিচের গুঁড়োতে ফুটন্ত গরম পানি মেশান। এরপর এতে গোটা লেবুর রস আর দেড় চামচ মধু নিন।নিয়মিত এ চা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। অবসাদ কাটাতে, ব্যথা উপশমে, ওজন কমাতে দারুণ কাজ দেয় হলুদ চা।
পুদিনা চা: ফুটন্ত পানিতে রোজমেরি মেশান। এরপর এতে ১০ থেকে ১২টা পুদিনা পাতা মেশান। দেওয়ার আগে একটু কুচি কুচি করে দিলে গন্ধটা পুরোপুরি থাকবে। এরপর ১৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। এতে পুদিনা পাতার চা পুরোপুরি তৈরি হবে।
লেবু চা: এই চা হজমের সমস্যা দূরে রাখার পাশাপাশি নার্ভের সমস্যা দূরে রাখে। স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে লেবু চা।
যষ্টিমধু চা: খাদ্যনালী ও পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে যষ্টিমধু চা। এলডিএল অক্সিডশন রুখে হার্টের সমস্যা দূরে রাখে, টেস্টোটেরনের সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে এই চা।
এছাড়াও উৎকণ্ঠায় ভোগার সমস্যায় উপকার পাবেন তুলসি চা খেলে। মস্তিষ্কের কোষ সুস্থ রাখতেও কার্যকর তুলসি চা। শুকনো কাশি কমাতে চাইলে এই চায়ে ধনে ও আদা মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে প্রদাহের প্রবণতাও কমবে।