নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তির উপায়

আশেপাশে তাকালে আমরা দেখতে পাই প্রত্যেকে প্রচণ্ড ব্যস্ত, কম্পিউটার, ফেসবুক, অনলাইন চ্যাটিং, টিভি, মোবাইল, বাইরে আড্ডা, রাতের পার্টি, ক্লাসে পড়াশোনার চাপ, অ্যাসাইনমেন্ট, দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি। এ সব কিছুর মধ্যে আমরা হারিয়ে ফেলেছি মা-বাবা, ভাইবোন সবাই একসঙ্গে টেবিলে বসে খাওয়া, গল্প করা, হাসাহাসি। আমরা এখন ক্লাসে বা কাজে যাওয়ার পথে রাস্তায়, ক্লাসের ফাঁকে কিছু একটা খেয়ে নিই। টেকনোলজি আমাদের সব কাজ এত সহজ করে দিয়েছে যে একেবারে হাতের মুঠোয় পৃথিবীকে এনে দিয়েছে। কিন্তু তারই আড়ালে কেড়ে নিয়েছে আমাদের আত্মিক সম্পর্কগুলো। আমাদের গ্রাস করে নিয়েছে একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণা ও ভয়াবহতা।
সময়ই তো সবচেয়ে দোষী। সেই তো নিয়ে আসে একাকীত্ব সৃষ্টি করেছে মানুষের নিয়তি। এই সময়ই এ পার্থিব জগৎ থেকে মানুষকে নিয়ে যায়। নিয়ে যায় অপার্থিব একলোকে, সেখানেও ভীষণ একা মানুষ। অতিরিক্ত মন খারাপ হলে মানুষ একেবারে নিরব নিথর হয়ে যায়। একা থাকতে ভালোবাসে। কারণ তখন তার সমস্যাকে নিজের মত করে কেউ দেখে না কিংবা মূল্যায়ন করে না। তাই মন খারাপের বেলায় একাকীত্বই হয় মানুষের একমাত্র সঙ্গী।
মাঝেমাঝেই আমরা সবাই কম-বেশি নিঃসঙ্গতা বা একাকীত্বে ভুগি। আসুন, জেনে নেই নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব কাটানোর বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে-
ব্যক্তি যত তাড়াতাড়ি নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠতে পারবে ততটাই তার জন্য মঙ্গলজনক। নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি পেতে পরামর্শ দিয়েছেন জন ক্যাসিপো। তার পরামর্শগুলো হলো-
• নিঃসঙ্গতার কারণ বুঝে আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।
• নিঃসঙ্গতা শরীর ও মনে কি প্রভাব ফেলতে পারে তা জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
• মন যাতে ভালো থাকে সে জন্য সামাজিক কাজকর্মে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
• আশেপাশের লোকজনের সাথে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
• ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে হবে এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে মনের কথাগুলো শেয়ার করতে হবে।
• অবস্থার উন্নতির জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ ও চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে।
জীবনের প্রতি এই গভীর উদাসীনতা কেবলই নিঃসঙ্গতাপ্রসূত। জনপ্রিয় মার্কিন ব্যাণ্ড লিনকিন পার্ক যখন বলে ‘Waiting for the end’ তখন এই সময়ের, এই যুগের,
এই বাস্তবতায় মানবমনের করুণ আর্তিই ধ্বনিত হয়। অবচেতনে জীবনের প্রতি এই বিরাগ যেন সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। এই নিঃসঙ্গতাবোধ থেকে মুক্তি পাবার সর্বজনস্বীকৃত পথ এখনো নেই। পথই বা কী করে থাকবে, সর্বজনস্বীকৃত মতই তো নেই। তবু মানুষের লড়াইটা চলুক। আর এ লড়াইটা একা ব্যক্তিমানুষের না। এই লড়াইটা সবার।