প্রতারণা মামলায় চার আফ্রিকান গ্রেপ্তার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে চার বিদেশীকে (নাইজেরিয়ান ও ঘানা) নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি টিম।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) সৈয়দা জান্নাত আরা।
তিনি জানান, মঙ্গলবার রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকার কাউলা ও বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে নাইজেরিয়ান দুই নাগরিক হলো- মরো মহাম্মদ, মরিসনও এবং ঘানার দুই নাগরিক সিসম ও এন্থনী।
তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৬টি ল্যাপটপ, বেশ কিছু সিম এবং ৬টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, তারা খেলোয়াড় ও স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আট বছর আগে মাত্র ৩০ দিনের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসে। তবে এরপর তারা বাংলাদেশে অবস্থান করে ফেসবুকে বিভিন্ন প্রতারণা চালিয়ে যতে থাকে।
প্রতারণার শিকার খায়রুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তি রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার সূত্র ধরে সিআইডি তাদের গ্রেপ্তার করে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এদের মধ্যে আট বছর আগে খেলোয়াড় হিসেবে আসা মরো মহাম্মদ, মরিসনও রয়েছেন। বাকি দুই ঘানার নাগরিক সিসম ও এন্থনী এসেছিলেন এক বছরের স্টুডেন্ট ভিসায়। তাদের কেউই ভিসার মেয়াদ বাড়াননি।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা অভিনব কায়দায় সাধারণত বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সাথে ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করে। বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে একটি তথাকথিত মেসেঞ্জার আইডি হতে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসহ পার্সেল উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে মেসেঞ্জারে এই সব মূল্যবান সামগ্রী এয়ারলাইন বুকিং এর ডকুমেন্ট পাঠায়।
এরপর এসব গিফট বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলে তারা ভিকটিমকে অবহিত করে এবং তা কাস্টমস হতে রিসিভ করতে বলে।
এ সময় তাদের অন্য সহযোগীদের মাধ্যমে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে মূল্যবান গিফটি গ্রহণসহ শুল্ক বাবদ মােটা অংকের টাকা কয়েকটি ব্যাংক একাউন্টে পরিশোধের জন্য চাপ দেয়।
গিফটটি রিসিভ না করলে আইনি জটিলতার ভয়ও দেখায়। ফলে ভিকটিম তাদের দেয়া বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে ৫৫ হাজার টাকা জমা দেন।
একইভাবে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে সারাদেশে অসংখ্য ভিকটিমের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা গত কয়েক মাসের মধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে সিআইডি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছে। আটক বিদেশীরা দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে এ ধরনের প্রতারণা করে আসলেও এদেশে তাদের অবস্থানের বৈধ কোন কাগজপত্র এবং পাসপোর্ট প্রদর্শন করতে পারেনি।
সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, প্রথমত তারা ট্যুরিস্ট, খেলোয়াড়, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু এজেন্টের সহায়তায় এধরনের প্রতারণা করে।
প্রতারণার সাথে সম্পৃক্ত ব্যাংক একাউন্টগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধানে সিআইডির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি চক্রটির সাথে জড়িত এদেশীয় সহযোগীদের আইনের আওতায় আনতে সিআইডি কাজ করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এ সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে স্বল্প মেয়াদী ভিসায় আসা আফ্রিকানদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অপরাধ চক্রে জড়িত এমন চক্রে প্রতারণার শিকারদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও এতি বছর তারা কী করে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল তা খতিয়ে দেখা হবে। এবিষয়ে সিআইডি এসবি’র সাথে আলোচনা করবে। কারণ ইমিগ্রেশন বিভাগ এসবি’র অধীনে।