প্রতিদিনের সংবাদ সম্পাদক রাহাত খান আর নেই
প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক, দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান আর নেই। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর ইস্কাটনে নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে বারডেমে চিকিৎসা নেন। সেখানে কয়েক দিন তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে কিছুটা সুস্থ হলে বাসায় ফিরে যান। বাসায় যাওয়ার কয়েক দিন পর আবার তার অবস্থার অবনতি ঘটে এবং গতকাল রাতে তিনি মারা যান।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অনন্য অবস্থানের অধিকারী ছিলেন রাহাত খান। সাবলীল বাংলায় গদ্যরীতিতে এক অনবদ্য অধ্যায়ের সূচনা করেন রাহাত খান। বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবনের টানাপড়েনের কথা ফুটে ওঠে তার গদ্যশৈলীতে। আধুনিক বাংলার কথাসাহিত্য অনন্য উচ্চতায় আসীন হয় রাহাত খানের লেখনীতে।
রাহাত খানের মরদেহ গতকাল রাতেই বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। আজ শনিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জানাজা শেষে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অমর কথাসাহিত্যিকের জন্ম ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের প্রান্তিক গ্রাম জাওয়ারে। ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে ২০০৭ সালে তিনি ওই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ১৫ থেকে ১৬ বছর ওই পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। ইত্তেফাকের পর দৈনিক বর্তমান এবং সর্বশেষ প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিও করতেন। ১৯৮০ সালে তার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ‘হে অনন্তের পাখি’ পত্রিকায় ছাপা শুরু হয়। রাহাত খানের প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে, কিশোর উপন্যাস ‘দিলুর গল্প’। প্রথম উপন্যাস ‘অমল ধবল চাকরি’ ১৯৮২-৮৩ সালে লেখা। ১৯৭৩ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে অর্জন করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। তত দিনে একটা ছোটগল্পের বই বেরিয়েছে। নতুন ধারার গল্প ছিল। তার ‘ঈমান আলীর মৃত্যু’ গল্পটি তখন খুব বিখ্যাত হয়েছিল। পত্রপত্রিকায় এই গল্প নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।
সম্পাদকের মৃত্যুতে প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার প্রকাশক মো. সাইদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন, প্রধান সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমানসহ সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে বরেণ্য এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।