বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চীনের অস্ত্র চোরাকারবারের তথ্য ফাঁস

Published: 4 October 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চীন সমর্থিত একটি বড় ধরনের অস্ত্রপাচার নেটওয়ার্কের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইকোনমিক টাইমস (ইটি)। ইটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করেছে। গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের একটি রাজ্যে লড়াইরত বিদ্রোহীগোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’র (এএ) জন্য পাঁচ শ চায়নিজ অ্যাসল্ট রাইফেল, ৩০টি ইউনিভার্সাল মেশিনগান, ৭০ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ এবং বিশাল গ্রেনেডের একটি চালান পাঠানো হয়েছে।

একইভাবে আরেকটি সক্রিয় বিদ্রোহীগোষ্ঠী ‘ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি’ও (ইউডাব্লুএসএ) চীন থেকে অস্ত্র পেয়েছে। বিষয়টি সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এই তথ্য জানিয়েছে বলে জানায় ইকোনমিক টাইমস। বলা হচ্ছে, মিয়ানমারের সাতটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে চীন অর্থায়ন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চালানটি মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের সৈকত হয়ে ‘আরাকান আর্মি’র হাতে পৌঁছে। অস্ত্রগুলো বাংলাদেশের মোনাখালী সমুদ্রসৈকতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইটি। আরাকান আর্মি চীনের নির্দেশে ভারত সমর্থিত মেগাপ্রকল্প ‘কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্প’-কে টার্গেট করছে। এ অঞ্চলে চীনা কার্যক্রমের ট্র্যাকিং করছে এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই তথ্য জানতে পেরেছে ইকোনমিক টাইমস।

কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্পটি রাখাইন রাজ্যের মধ্য দিয়ে গেছে। এই প্রকল্পটি ওই অঞ্চলের আকার বদলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কালাদান প্রকল্পটি কলকাতাকে রাখাইন রাজ্যের সিটওয়ে বন্দরের সঙ্গে সমুদ্রপথে যুক্ত করেছে। আর আরাকান আর্মি এই প্রকল্পটিকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চলেছে। এমনই দাবি করা হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মতে, আরাকান আর্মি ও ‘ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি’-কে সামরিক সহায়তা দেওয়া হলো চীনের প্রতারণা। বেইজিং বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মধ্যস্থতা করার সময় তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে চীন। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বিরক্ত। এমন অবস্থায় ও ঋণের জালে আটকা পড়া মিয়ানমার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, সংক্ষেপে বিআরআই প্রকল্প নিয়ে বিলম্ব করছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অবস্থা নিয়ে গবেষণা করেন এমন এক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ জানান, আরাকান আর্মির অর্থ তহবিলের ৯৫ শতাংশ আসে চীনের কাছ থেকে। এ ছাড়া অস্ত্র, ইউনিফর্ম এবং গোলাবারুদও যায় চীন থেকে। বেইজিংয়ের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ পয়েন্ট বিআরআই প্রকল্প কিউকফিউয়ু গভীর সমুদ্রবন্দরটি রক্ষার জন্যও একে একে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে চীন।

একটি চীনা-পাকিস্তানি অভিযুক্ত চক্র আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) ছাড়াও আরাকান আর্মিকে চীনের তৈরি অস্ত্র সরবরাহ করে বলে জানতে পেরেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এই তথ্যও জানিয়েছে ইটি। সম্প্রতি থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে কয়েকজনের গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। থাই কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তদন্তের সব তথ্য শেয়ার করেছে।

জুনের শেষের দিকে মিয়ানমারের কারেন রাজ্যের মায়াওয়াদি সীমান্তের কাছে ময়েসট শহরের কাছ থেকে একটি জাহাজ আটক করেন থাইল্যান্ডের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। আটক করে দেখা যায়, সেটি আধুনিক চীনা অস্ত্রে বোঝাই। সব অস্ত্রই নতুন। সব অস্ত্র জাহাজে লুকিয়ে পাঠানো হচ্ছিল। পরে তাঁরা সেগুলো জব্দ করেন। সেই সঙ্গে দুজন থাই নাগরিককেও আটক করা হয় বলে জানানো হয়েছে।

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) বিরুদ্ধে বিদেশি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে। করাচিতে বসবাসরত রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত পাকিস্তানি আবদুল কুদ্দুস বার্মিকে মনে করা হয় এই দলটির পরামর্শদাতা। তিনি মিয়ানমারে ‘জিহাদ’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি আবার লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) সঙ্গে যুক্ত। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দলিল রয়েছে বলে দাবি করছে ইকোনমিক টাইমস।