নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ভয়াবহ নির্যাতন, ভিডিও প্রচার
বিশেষ সংবাদদাতা , ঢাকা : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে মুখে লাথি মারাসহ ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছেন একদল যুবক। শুধু তা-ই নয়, এই পৈশাচিকতার দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারও করেছেন তাঁরা। অভিযোগ রয়েছে, গত ২ সেপ্টেম্বর উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বড়খালের পাশে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, বাদল, কালাম, আবদুর রহিমসহ পাঁচজন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
৩২ দিন পর গতকাল রবিবার ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। পুলিশের পাঁচটি ইউনিট অভিযুক্তদের ধরতে অভিযানে নেমেছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুই দফায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এক আসামিকে রবিবার বিকেল ৪টায় এবং অপর আসামিকে রাত ১১টায় একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে মো. আব্দুর রহিম (২২) ও একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মো. রহমত উল্যাহ (৪১)।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর আগে ভুক্তভোগী গৃহবধূর বিয়ে হয়। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। স্থানীয় দেলোয়ার বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার রহিম, বাদল, কালামসহ অন্য সহযোগীদের নিয়ে গৃহবধূর বাড়িতে যান। সেখানে তাঁরা স্বামীসহ ওই গৃহবধূ অনৈতিক কাজ করেছেন বলে অভিযোগ এনে নির্যাতন চালান। গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন তাঁরা। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগ রয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই গৃহবধূ নিজের সম্ভ্রম রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন; কিন্তু নির্যাতনকারী কয়েকজন যুবক তাঁর পোশাক কেড়ে নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলতে থাকে। এ সময় তিনি হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন এবং তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু এক যুবক কয়েকবার তাঁর মুখমণ্ডলে লাথি মারেন এবং পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেন। তাঁর শরীরে একটা লাঠি দিয়ে আঘাতও করতে থাকেন। তাঁর নগ্ন ছবি ধারণের চেষ্টা চালান তাঁরা। একজন হাত উঁচিয়ে তাঁকে উৎসাহ দেন। আরেকজন তাঁর শরীরের অবশিষ্ট পোশাক টেনে নেন। এ সময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবেন বলে চিৎকার করেন একজন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘আমি নিরীহ লোক। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোনো কথা বলার সাহস পাই না। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাই।’
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম ভুঁইয়া।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি নজরে এলে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পরে গতকাল সন্ধ্যায় নির্যাতিত গৃহবধূকে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। থানার ওসি হারুন অর রশিদ চৌধুরী বলেন, বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে এবং নির্যাতিতার পরিবারকে আইনি সহযোগিতা দিতে জেলা পুলিশের পাঁচটি ইউনিট মাঠে কাজ করছে।