গিনেস বুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিবরিয়া
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্যাটাগরির ওয়েবসাইট তৈরি করে এবার রেকর্ড গড়লেন আলম কিবরিয়া নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার এক তরুণ।
তার তৈরিকৃত সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ক্যাটাগরির ওয়েবসাইট ‘www.amargram.xyz’ – বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্যাটাগরির ওয়েবসাইটের স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ।
রোববার গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতিপত্র হাতে পৌঁছায় কিবরিয়ার। বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের সব তথ্য এক ঠিকানায় নিয়ে আসতেই এই ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন কিবরিয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের গাজীকান্দি গ্রামের হীরণ মোল্লার ছেলে আলম কিবরিয়া তার সাত ভাই-বোনের মধ্যে ষষ্ঠ। বাবা হীরণ মোল্লা পেশায় কৃষিজীবী। আর মা খাদিজা বেগম গৃহিণী। ২০১৬ সালে নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেন কিবরিয়া।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করার জন্য ঢাকায় চলে যান। কোচিং করার ফাঁকে কয়েক মাস একটি আইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওয়েব ডেভেলপিংয়ের কাজ শিখেন। তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ থেকেই নিজের নাম গিনেস বুকে তোলার ইচ্ছা জাগে মনে। আর তাই করোনা ভাইরাসের মহামারিকালে ঘরে শুয়ে-বসে সময় নষ্ট না করে ‘আমার গ্রাম’ ওয়েবসাইট তৈরির কাজে হাত দেন কিবরিয়া।
তার পরিকল্পনা ছিল, বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের নামসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ও ফোন নাম্বার এক ঠিকানায় নিয়ে আসা। সেই থেকেই সর্ববৃহৎ ক্যাটাগরির ওয়েবসাইট বানানোর কাজ শুরুর করেন। টানা কয়েক মাস প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা করে সময় ব্যয় করেন ওয়েবসাইট তৈরির কাজে।
কিবরিয়া বলেন, ওয়েব সাইটের ডোমেইন কিনে আমি নিজেই ডিজাইন ও ডেভেলপিংয়ের কাজ করেছি। পরিবারের কেউ জানতো না আমি সারাদিন ঘরে বসে কী কাজ করছি বা কী তৈরি করছি। কারণ আমার পরিবারের কারও তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। করোনা ভাইরাসের সময়টাতে আমি ঘরেই ছিলাম। কিন্তু ঘরে শুয়ে-বসে সময় নষ্ট না করে ওয়েবসাইটের কাজ করেছি। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও সরকারি ওয়েবসাইট এবং গুগল ও উইকিপিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার ওয়েবসাইটটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্যাটাগরির। পাঁচ হাজার ৫৬৬টি ক্যাটাগরি যুক্ত করা হয়েছে সাইটটিতে। সাইটটিতে ঢুকলেই বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মানচিত্র দেখা যাবে। মানচিত্র অনুযায়ী জেলায় ক্লিক করলেও ওই জেলার সব উপজেলা ও ইউনিয়ন এবং গ্রামের নামসহ প্রয়োজনীয় তথ্য চলে আসবে। আপাতত ৬৮ হাজার গ্রামের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি। কিন্তু গ্রামের তথ্যগুলো এখনও হালনাগাদের কাজ চলছে। যে কেউ চাইলে সাইটে গিয়ে তার নিজ গ্রামের তথ্যগুলো হালনাগাদ করতে পারবে- এমন ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওয়েবসাইট তৈরির পর পাঁচ মার্কিন ডলার খরচ করে আমি গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে গত ২০ সেপ্টেম্বর আবেদন করি এটিকে সবচেয়ে বেশি ক্যাটাগরির ওয়েবসাইটের স্বীকৃতি দিতে। গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ আমার আবেদন যাচাই-বাছাই করার পর স্বীকৃতি দেয়। রোববার তাদের স্বীকৃতিপত্র হাতে পেয়েছি।
এখন ওয়েবসাইটের নিরাপত্তার দিকটি আরও গুরুত্ব দিচ্ছি। সবাই যখন তাদের প্রয়োজনে আমার বানানো ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিতে পারবেন- তখনই নিজেকে সার্থক মনে হবে, বলেন তিনি।