করোনার ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার পাবেন কারা?
পোস্ট ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮ মাস ধরে চলা অস্থিতিশীলতা ও ১০ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ হারানোর পর অবশেষে আমরা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছি। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় দেড়শ ভ্যাকসিন ডেভেলপ হচ্ছে এবং এরমধ্যে অন্তত ৪০টি তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে রয়েছে। তাই আশা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ নাগাদই ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছে বিশ্ব। তবে তা ২০২১ সালের শুরুর দিকেও আসতে পারে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।
তবে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়া এক বিষয় আর তা মানুষের কাছে পৌঁছানো আরেক বিষয়। প্রথম দিকে বিশ্বের সকল মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না এটা নিশ্চিত। ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে, কার আগে ভ্যাকসিন পাওয়া উচিৎ? যদিও আমরা জানি, আমাদের যত বেশি সম্ভব জীবন বাঁচাতে হবে। তবুও আমরা আসলে নিশ্চিতভাবেই জানি না কারা ভ্যাকসিন আগে পাবেন।
স্বাভাবিকভাবে ৬৫ বছর এবং এর থেকে বেশি বয়স্করা করোনা ভাইরাসে সবথেকে বেশি মৃত্যুঝুকিতে থাকে। তাই ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে এবং তা মানুষের হাতে পৌঁছাতে শুরু করলে বয়স্করাই সবথেকে বেশি প্রাধান্য পাবেন। তবে মহামারি তার ধরণ পাল্টায়। তাই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পূর্বেই আমাদেরকে অবশ্যই এটি নিশ্চিত করতে হবে যে কাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাথমিক দিকে ভ্যাকসিন বণ্টন করা হবে।
এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এরইমধ্যে একটি খসরা নীতিমালা তৈরি করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বিশেষ দল এরইমধ্যে সুপারিশ করেছে যাতে বৃদ্ধরা এবং করোনার বিরুদ্ধে সক্রিয় সম্মুখযোদ্ধারা আগে ভ্যাকসিন পান। গত সপ্তাহে মার্কিন ন্যাশনাল একাডেমিস অব সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড মেডিসিন ভ্যাকসিন বন্টনের একটি কাঠামো প্রকাশ করেছে। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের পাশাপাশি যারা খাদ্য ও যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ন খাতে কাজ করেন তাদেরকেও ভ্যাকসিন সুবিধার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছে।
তবে একটি বিষয় এখনো সবকিছু অস্পষ্ট করে রেখেছে তা হলো, প্রথম দিকে আমরা আসলে কি পরিমাণ ভ্যাকসিন পাব প্রয়োগের জন্য। ২০০৯ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিয়ে চালানো এক গবেষণা অনুযায়ী, যদি একেবারেই সীমিত ভ্যাকসিন পাওয়া যায় তাহলে সবথেকে ঝুকিপূর্ন রয়েছে যারা তাদেরকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। যদি তুলনামূলক একটু বড় সংখ্যায় ভ্যাকসিন পাওয়া যায় তাহলে জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে যাদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পরার ঝুঁকি সবথেকে বেশি তাদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সম্প্রতি জার্মানির গবেষকরা জানিয়েছেন, যদি দেশে পর্যাপ্ত পরীক্ষা হয়ে থাকে এবং জানা থাকে যে কোথায় সবথেকে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে তাহলে সেসব স্থান শনাক্ত করে ভ্যাকসিন কার্যক্রমন পরিচালনা করলে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এরমধ্য দিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যাবে বলে জানিয়েছেন তারা। এটি হয়ত গাণিতিক হিসেব শুধু। তবে এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, সংক্রমণ থামিয়ে দেয়া আসলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।