সিসি ক্যামেরার ফুটেজে রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আনার সত্যতা মিলেছে

Published: 14 October 2020

সিলেট অফিস : পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ ঘেঁটে রায়হান আহমেদকে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আনা এবং নির্যাতনের বিষয়টির সত্যতা মিলেছে; যদিও শুরু থেকেই মূল অভিযুক্ত উপপরিদর্শক আকবর দাবি

করছেন রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে আনা হয়নি। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে তিনি সত্য বলেননি। এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া পলাতক রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করলেও পুলিশ বলছে, অভিযুক্তরা তাদের হেফাজতেই আছেন।

এদিকে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ হেফাজতে রায়হান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।

 

সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমেদ। রিকাবীবাজার এলাকায় স্টেডিয়াম মার্কেটের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করতেন তিনি। গত রবিবার সকালে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হান মারা যান। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নগরের কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে এলাকাবাসী রায়হানকে আটক করে এবং গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশ তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হানের মৃত্যু হয়। কিন্তু পরে জানা যায়, পুলিশের বক্তব্য সঠিক ছিল না। নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গত রবিবার মধ্যরাতে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করেন।

পরে এসএমপির তদন্ত শেষে গত সোমবার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারের পর থেকে মূল অভিযুক্ত আকবর হোসেন লাপাত্তা রয়েছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে। এসব বিষয়ে জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ‘যাঁরা অভিযুক্ত তাঁদের সবাইকে পুলিশ লাইনসে যুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা সেখানেই আছেন।’

ঘটনার সত্যতা মিলল সিসিটিভি ফুটেজে : পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুতে গঠিত তদন্ত কমিটি নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছে। বন্দরবাজার ফাঁড়ির পাশঘেঁষা সিলেট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায়ও ধরা পড়েছে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে আনা-নেওয়ার ছবি।

ফুটেজে দেখা গেছে, গত শনিবার রাত ৩টা ৯ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে দুটি অটোরিকশা এসে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে থামে। সামনের অটোরিকশা থেকে তিন পুলিশের সঙ্গে রায়হানকে নামতে দেখা যায়। তিনি হেঁটে ফাঁড়িতে ঢোকেন। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর সকাল ৬টা ২২ মিনিটে একটি অটোরিকশা আসে বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে। এর ঠিক দুই মিনিট পর ৬টা ২৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে দুই পুলিশের কাঁধে ভর করে রায়হানকে অটোরিকশায় তুলতে দেখা যায়। এরপর তাঁকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট : এদিকে পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। সিলেটের শাহপরান থানার বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ ফজলে এলাহী জনস্বার্থে গতকাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন দাখিল করেন।