ট্রাম্পকে ভোট না দেওয়ার আহবান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে নারীদের বিক্ষোভ
পোস্ট ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দ্বিতীয় মেয়াদে ভোট না দিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন নারীরা। শনিবার দেশটির রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ বড় বড় শহরে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার নারী।
আগামী ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে তাকে পরাজিত করার আহ্বানে এ বিক্ষোভ পালন করা হয়। এদিকে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় মিশিগানের নেয়া নীতি ও বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য রাজ্যটির ডেমোক্রেট গভর্নর গ্রিচেন হুইটমারের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও আলজাজিরার।
২০১৭ সালে প্রথম ট্রাম্পবিরোধী ‘ওমেন্স মার্চ’ হয়েছিল ওয়াশিংটনে। আয়োজকরা বলছেন, সেই বিক্ষোভ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা শনিবারের বিক্ষোভ করেন। ওয়াশিংটনে ফ্রিডম প্লাজায় সমবেত জনতার উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন ওমেন্স মার্চের নির্বাহী পরিচালক র্যাচেল ও’লিয়ারি।
আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিতে নারীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যখনই আমরা একত্রিত হই, যখনই আমরা রাস্তায় নামি, যখনই আমরা ভোট দিই, তখনই যুক্তরাষ্ট্রে একক সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠেন নারীরা। এমন কিছু নেই, এমন একটি বিষয়ও নেই যা দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের থামিয়ে দিতে পারেন।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা নারী প্রগতির আইকন সুপ্রিমকোর্টের প্রয়াত বিচারপতি রুথ ব্যাডার গিন্সবার্গের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রক্ষণশীল বিচারক এমি কোনি ব্যারেটকে তার স্থলাভিষিক্ত করায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ করেন।
ব্যারেটকে বাছাই করা নিয়ে ডেমোক্রেটদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২২ অক্টোবর সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিতে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নির্বাচন এগিয়ে আসার মুহূর্তে ব্যারেটকে মনোনীত করায় তারা ক্ষুব্ধ। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন মেরিক গারল্যান্ডকে ২০১৬ সালের নির্বাচনের ছয় মাস আগে এভাবে বেছে নিয়েছিলেন তখন তাতে বাধা দিয়েছিলেন রিপাবলিকানরা।
নারীবাদী গ্রুপ আলট্রাভায়োলেটের পরিচালক সোঞ্জা স্পু বলেন, প্রকৃত সত্য হল আমরা হলাম শক্তিশালী। আর তারা হল ভীতু। তারা এখন একটি রশির ওপর দিয়ে হাঁটছে। তারাও এটা জানে। আমরা তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার মতো অবস্থায় রয়েছি। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা, গর্ভপাত, জলবায়ু পরিবর্তন, ভোটের অধিকার ও ওবামাকেয়ার ইস্যুতে সিনেটে প্রশ্ন করা হলে এর সদুত্তর দিতে পারেননি এমি কোনি ব্যারেট। য
দি তিনি সুপ্রিমকোর্টে বিচারকের পদে বসেন তাহলে সেখানে ৬-৩ ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা। ফলে রিপাবলিকানরা যা চাইবেন, তাই করতে পারবেন। এজন্য শনিবার ওয়াশিংটনে বিক্ষোভে অংশ নেন বিপুলসংখ্যক নারী।
তাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুখে মাস্ক পরা। অনেকেই পরা ছিলেন বিচারপতি গিন্সবার্গের মতো কালো ঢিলেঢালা পোশাক ও লেস কলার পরা। এ সময় জনতার মাঝে একটি ব্যানারে লেখা দেখা যায়, আপনার কন্যার ভবিষ্যতের জন্য ভোট দিন। একজন মেয়ের মতো লড়াই করুন। নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিক্ষোভ হয়েছে। ব্যাডার গিন্সবার্গ আন্ডারগ্রাজুয়েট হিসেবে এখানে যে ডরমেটরিতে থাকতেন তার বাইরে এমন সমাবেশ হয়েছে।
মিশিগান সমাবেশে গভর্নরের কড়া সমালোচনা ট্রাম্পের : করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় মিশিগানের নেয়া নীতি ও বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য রাজ্যটির ডেমোক্রেট গভর্নর গ্রিচেন হুইটমারের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। করোনাকে শুরু থেকেই ট্রাম্প খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। শনিবার মিশিগানের মাস্কিগনে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে সমর্থকরা হুইটমারের বিরুদ্ধে ‘তাকে আটকে রাখো’ স্লোগান দেয়।
দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর মধ্যে তিন দিনের প্রচার মিশিগান দিয়ে শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ‘দোদুল্যমান’ এ রাজ্যগুলোর বেশ কয়েকটিতে চার বছর আগে ট্রাম্প জিতলেও এবার বেশির ভাগ রাজ্যের জনমত জরিপেই ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন।
শনিবার মিশিগান ও উইসকনসিনে বড় সমাবেশ করে রিপাবলিকানরা। এ দুই রাজ্যে সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু ট্রাম্পের সমাবেশে অংশ নেয়া বেশির ভাগ মানুষ সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা মানেননি, তাদের কারও মুখে মাস্ক ছিল, কারও কারও ছিল না। মিশিগানের সমাবেশে গভর্নর গ্রিচেন হুইটমারকে লক্ষ্য করে ট্রাম্প বেশ কয়েকবার আক্রমণ করেন। করোনা সংক্রমণ রুখতে তার নিয়মনীতির সমালোচনা করে তাকে ‘অসৎ’ বলেন ট্রাম্প।
হুইটমারকে অপহরণে ডানপন্থি একটি গ্রুপের ষড়যন্ত্র এফবিআইয়ের বানচাল করে দেয়ার ঘটনা নিয়েও তিনি হাস্যরস করেন। তারা বলে তিনি (হুইটমার) হুমকির মুখে ছিলেন আর এজন্য তিনি আমাকে দোষারোপ করেছেন। আশা করছি, আপনারা তাকে শিগগিরই প্যাক করে পাঠিয়ে দেবেন- বলেন ট্রাম্প। জো বাইডেনের রানিংমেট হওয়ার দৌড়েও ছিলেন গভর্নর হুইটমার।
২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানরা নিয়মিতই স্লোগান দিত। নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের আচরণ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মিশিগানের গভর্নর হুইটমার। হুইটমারকে নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘বিষাক্ত আক্রমণ’ বলেছে বাইডেনের প্রচার শিবির।
শনিবারের সমাবেশগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনেরও ব্যাপক সমালোচনা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, বাইডেন জিতলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ব্যাহত হবে। বাইডেন দেশ অচল করে দেবেন, টিকা দেরিতে আনবেন এবং মহামারীকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করবেন। রোববার ট্রাম্পের নেভাডায় সমাবেশ করার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি হিলারির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।
নির্বাচনে ফ্লোরিডায় হারলে গভর্নরকে বরখাস্তের হুমকি ট্রাম্পের : এবার নির্বাচনে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে গেলে সেখানকার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসকে বরখাস্ত করা হবে বলে সতর্ক করেছেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার এক নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফ্লোরিডার গভর্নরকে বলেন- রন, আমরা এই অঙ্গরাজ্যে বিজয়ী হতে যাচ্ছি তো? খবর ফোর্বসের।
ট্রাম্প বলেন, আপনারা জানেন আমরা যদি বিজয়ী না হই, তাহলে তার দায় কিন্তু গভর্নরের। যেভাবেই হোক আমি তাকে বরখাস্ত করব। ফ্লোরিডার সমাবেশে সমর্থকদের চাঙ্গা রাখতে ট্রাম্প আরও একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আরও চার বছরের জন্য নয় বরং ১২ বছরের জন্য আমি নির্বাচিত হব। বেশি মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে ট্রাম্প এবারই প্রথম এ ধরনের বক্তব্য দেননি। গত মাসেও ট্রাম্প এ ইস্যুতে বলেছিলেন- তিনি তৃতীয় মেয়াদের জন্য আলোচনা করবেন।
ভোটের আগে ২২ লাখ বিজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম : ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ভোটে বাধা’ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এমন ২২ লাখ বিজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেছে। ১ লাখ ২০ হাজার পোস্ট প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফেসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। ফেসবুক ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার চেষ্টা করছে। ওই নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হন।
এ সময় রাশিয়া থেকে ভোটার মেনিপুলেট করতে এ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। ফেসবুকের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স এবং কমিউনিকেশনবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লিগ বলেন, ৩৫ হাজার কর্মী আমাদের প্ল্যাটফরমের নিরাপত্তা এবং নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয় তদারকির দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, তথ্য যাচাইয়ের জন্য ফ্রান্সের ৫টিসহ ৭০টি বিশেষ মিডিয়ার সঙ্গে আমরা অংশীদারিত্ব সম্পর্ক স্থাপন করেছি। এএফপিও এর অংশীদার।